আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো বহিঃশক্তির পরামর্শে নয়, দেশের সংবিধান মেনেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন মানে হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে পরাজিত হতে হবে। এখন নির্বাচনে হেরে কি আওয়ামী লীগকে প্রমাণ দিতে হবে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। যত সংশয় থাকুক না কেন, এ দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কারও কথায়, দেখানো রূপরেখা ও অন্য কোনো শক্তি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। নির্বাচন হবে সংবিধান ও সময় অনুযায়ী।’
মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকেলে রাজধানীতে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইসকন স্বামীবাগ আশ্রয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কারও কারও মধ্যে আশঙ্কা কাজ করছে। আমি একটা কথা বলতে চাই, আমাদের দেশে অনেক নির্বাচন অতীতে দেখেছি। যতবারই নির্বাচনকে সামনে রেখে আশঙ্কা ছিল, ততই আলো ঝলমলে সকাল এসেছে। আমরা কারও ভিসানীতি, নিষেধাজ্ঞা এসব বিবেচনা করে নির্বাচনে যাচ্ছি না। আমাদের নজর সংবিধানের দিকে, দেশের জনগণের দিকে।
ভারতকে সময়ের পরীক্ষিত বন্ধু উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আজকে বিশ্বে অনেক বিষয় রয়েছে। যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট। এখানে বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো কথা হবে কি না, এটা নিয়ে তো ভারতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়নি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বোঝানোর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আমরা কোনো প্রস্তাবও পাঠাইনি।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে ভিসানীতি প্রয়োগ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কিছু করণীয় আছে কি না, সেটা তার দৃষ্টিকোণ থেকে তার নিজস্ব ব্যাপার। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত কোনো প্রশ্ন বা হস্তক্ষেপ করেছে- এমনটা জানা নেই।
ওবায়দুল কাদের জানান, শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুঃসময়ে, দুঃখ-কষ্টে দুর্যোগে আওয়ামী লীগ সনাতন ধর্মালম্বীদের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
সনাতন ধর্মালম্বীদের উদ্দেশ্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছি। আপনাদের নিজেদের কখনো সংখ্যালঘু মনে করা উচিত না। অন্যান্য ধর্মের মতো আপনারাও দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। আপনাদের আর মুসলিম ভোটারের অধিকার সমান। বাংলাদেশের সব মানুষই প্রথম শ্রেণির নাগরিক।
ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, বাংলাদেশে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্তী, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।
পরে রথযাত্রা উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। পরে সেখান থেকে বর্ণাঢ্য সাজে তিনটি বিশাল রথে জগন্নাথ দেব, শুভদ্রা ও বলরামের প্রতিকৃতিসহ শোভাযাত্রা বের হয়।
শোভাযাত্রা জয়কালি মন্দির, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলার মোড়, বঙ্গভবন মোড়, গুলিস্থান, জিপিও, সচিবালয়ের সামনে দিয়ে হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, জগন্নাথ হল ও পলাশী হয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।