ইসলাম ধর্মে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ—জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যে দিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান’। (সূরা: তওবা, আয়াত: ৩৬)
এর মধ্যে জিলহজ মাস একটি। এটি আত্মত্যাগের মাস। মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.) এ মাসেই নিজের প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে (আ.)-কোরবানির মাধ্যমে প্রভুপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যদিও আল্লাহর বিশেষ রহমতে ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি হয়েছে।
চলতি জুন মাসের ৭ তারিখ মোতাবেক আরবি ২৯ জিলকদ সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে সম্মানিত মাস জিলহজ। ৮ জুন জিলহজ মাসের প্রথম দিন গণনা শুরু হবে। সেক্ষেত্রে ঈদুল আজহা ও কোরবানি হবে ১৭ জুন। আর যদি ৭ জুন চাঁদ দেখা না যায়, তবে ৮ জুন জিলকদ মাস ৩০ দিন পূর্ণ হবে। ৯ জুন শুরু হবে জিলহজ মাস। সেক্ষেত্রে পবিত্র ঈদুল আজহা ও কোরবানি হবে ১৮ জুন।
জিলহজের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত ও ইবাদত
জিলহজের প্রথম ১০ দিন মহান আল্লাহর কাছে খুব বেশি প্রিয়। এ সময়ে সামান্য আমলে অতি সহজে মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা সূরা ফজরের ২ নম্বর আয়াতে ১০ রাতের কসম করে বলেন, وَ الۡفَجۡر- وَ لَیَالٍ عَشۡرٍ
উচ্চারণ: ‘ওয়াল ফাজর ওয়ালায়ালিন আশর’।
অর্থ: ‘শপথ ফজরের,শপথ দশ রাতের’।
অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, এখানে ১০ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাত উদ্দেশ্য। আর স্বয়ং আল্লাহ যখন কোনো সময়ের কসম খান, সেটার গুরুত্ব যে কতখানি, তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের নেক আমল আল্লাহর কাছে যত প্রিয়, আর কোনো দিনের আমল তত প্রিয় নয়। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, আল্লাহর পথে জিহাদও কি এর চেয়ে প্রিয় নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও এ ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে প্রিয়তর নয়। তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের প্রাণ ও সম্পদ নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে যান এবং কোনো কিছু নিয়ে আর ফিরে আসেন না’। (বুখারি: ৯৬৯)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দিনসমূহ হলো জিলহজের প্রথম ১০ দিন’। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ১৭৮৫)
জিলহজ মাসের তাৎপর্যের বিষয়ে বিশ্ব বিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, জিলহজের প্রথম ১০ দিন এর বিশেষ গুরুত্বের কারণ হলো, এ দিনগুলোতে ইসলামের ৫টি রুকন বা মৌলিক কাজের সমাহার রয়েছে। যেমন ঈমান ও সালাত অন্য দিনগুলোর মতো এ দিনগুলোতেও বিদ্যমান। জাকাত বছরের অন্য যেকোনো সময়ের মতো এ সময়েও আদায় করা যায়। আরাফার দিনে রোজার নির্দেশ থাকায় ইসলামের আরেকটি রুকন রোজার নজিরও এ ১০ দিনে পাওয়া যায়। আর ৫ম রুকন হজ এ ১০ দিনেই পালনযোগ্য। আবার ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরবানিও এ সময়ে আদায় করতে হয়।
সুতরাং মাস হিসেবে রমজান আর দিন হিসেবে জিলহজের প্রথম ১০ দিন শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ। আর তাই, একজন ঈমানদারের এ দিনগুলোতে ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষভাবে মগ্ন হওয়া প্রয়োজন।