জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, হত্যাপরবর্তী কর্মকাণ্ডে সেটাই প্রমাণিত হয়। জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতীয় সংসদে ওই অনির্ধারিত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুনি মোশতাক, জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলেন। এরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর জিয়াউর রহমান সেনা বাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের হত্যা করেছেন। জাতির পিতার হত্যাকারীদের সাজা দেওয়ার বদলে পুরস্কৃত করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা করেছেন।
কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো একটি সুরক্ষিত জায়গায় কীভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো সম্ভব- এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয়, সেজন্য দায়মুক্তি দিয়ে আইন করা হয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলহত্যার বিচার করেছে। বিচারকাজ চলার সময় ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এই মামলার একজন আসামিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে বিদেশে পোস্টিং দেন। তারা যে হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কর্মকাণ্ডেই তা প্রমাণ হয়।
জিয়া যেমন খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন, তেমনি এইচ এম এরশাদও একই কাজ করেছেন বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুককে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন এরশাদ। অথচ ফারুক অবৈধ অস্ত্রসহ এনএসআইয়ের হাতে ধরা পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অনেক বড় কথা বলেন। তিনিও ওই খুনিদের নিয়ে রাজনৈতিক দল করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠন করে অনেক বাধা অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছে। রায় কার্যকর করেছে। কিছু খুনি এখনো বিদেশে পালিয়ে আছে। তাদের ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, সামরিক শাসন দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। তারা মানবাধিকার কীভাবে সংরক্ষণ করবে?
হত্যাকারীদের বিচার করে সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পঁচাত্তরের পর আইনের শাসন ছিল না। বিচারের বাণী নিভৃতেই কেঁদেছে। আমি নিজেও বহুবার হাইকোর্টে গেছি, কথা বলেছি। বিচারের বাণীতো এখানে নিভৃতে কাঁদে। আমার বাবা, মা, ভাইয়ের হত্যার বিচার পাবো না, এই দেশে এমন আইন ছিল। ক্ষমতায় আসায় এ হত্যার বিচার সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে অভিশাপমুক্ত না করলে দেশের অর্থনীতির উন্নতি করা সম্ভব হতো না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের ওই আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, বেনজির আহমদ, মোছলেম উদ্দীন, নাহিদ ইজহার খান ও তানভীর শাকিল জয় এবং বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ। তবে বিএনপির কোনো সংসদ সদস্য এই আলোচনায় অংশ নেননি।