নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতবে- এই আশা করাটা হয়তো দুরহ। তবুও প্রতিটি দলেরই চেষ্টা থাকে, প্রতিপক্ষের মাটিতে স্মরণীয় কিছু করে দেখানোর। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে তেমন কিছু করে দেখানোর সুযোগ ছিল কি ছিল না- তা হয়তো বিতর্কের বিষয়।
কিন্তু বৃষ্টি আইন ডার্কওয়ার্থ অ্যান্ড লুইস মেথড (ডিএল) নিয়ে যে নাটক মঞ্চস্থ হলো আজ নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে, তা রীতিমত বিস্ময়কর, ন্যাক্কারজনক। ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো এবং টিভি আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি যে নাটকের পর নাটকের জন্ম দিলেন, তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কেবলই বাংলাদেশ।
নেপিয়ারে আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল দিবারাত্রির। এই ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং শুরুর খানিক পর বৃষ্টির বাধা। কয়েকবার বৃষ্টির পর নিউজিল্যান্ড খেলেছে ১৭.৫ ওভার। সংগ্রহ করেছেন ৫ উইকেটে ১৭৩ রান।
এরপর ম্যাচ রেফারি সিদ্ধান্ত দিলেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং সেখানেই শেষ। লক্ষ্য তাড়া করতে নামবে বাংলাদেশ। যেহেতু বৃষ্টির কারণে কার্টেল ওভারের খেলা। সুতরাং, নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং কন্ডিশন হিসেব করেই বাংলাদেশের সামনে নতুন লক্ষ্য দাঁড় করানো হবে।
সেই লক্ষ্য ম্যাচ কর্মকর্তারা দাঁড় করিয়েছেনও। ১৬ ওভার খেলতে হবে বাংলাদেশকে। জিততে হলে এই ১৬ ওভারে করতে হবে ১৪৮ রান। লক্ষ্য হাতে পেয়ে ব্যাট করতে নেমেও গেলো বাংলাদেশ। দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম এবং লিটন কুমার দাস সে হিসেবে ব্যাটিংও শুরু করলেন।
কিন্তু মাঠে যখন নাঈম-লিটনরা ব্যাট করছিলেন, তখন নিউজিল্যান্ড ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের রুমে চলছে তোলপাড়। কিভাবে কী লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলো? ডার্কওয়ার্থ অ্যান্ড লুইস মেথড অনুসারে কী এই লক্ষ্য দাঁড়ায় বাংলাদেশের সামনে? তুমুল আলোচনা।
ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডের অফিসিয়াল টুইটার পেজেও আপডেট দেয়া হয়েছে, ১৬ ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৪৮ রান। আইসিসিও একই তথ্য প্রকাশ করে। যদিও পরে তারা সেই টুইট আপডেট করে নিয়েছিল।
বাংলাদেশের প্রথম ওভার খেলা হয়ে যাওয়ার পরই টনক নড়ে ম্যাচ রেফারির। তিনি চতুর্থ আম্পায়ার শন হেইগকে নিয়ে আলোচনায় বসে যান। এ সময় ম্যাচ রেফারির রুমে অস্থির পায়চারি করতে দেখা যায় কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো এবং ম্যানেজার সাব্বির খানকে। আলোচনা শেষে যখন ম্যাচ রেফারি নতুন লক্ষ্য ঘোষণা করেন, তখন বাংলাদেশ খেলে ফেলে ৯টি বল। এ সময় খেলা ৫ থেকে ৬ মিনিট বন্ধও থাকে।
নতুন লক্ষ্য সেট করে দেয়া হয় ১৬ ওভারে ১৭০ রান। কিন্তু ততক্ষণে বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ৯টি বল। ১৪৮ রানের মানসিকতা নিয়ে নাঈম-লিটনরা সেই ৯টি বল খেলেছেন। ১৭০ রানের লক্ষ্য আগে সেট করা থাকলে খেলার অ্যাপ্রোচটা ভিন্নও হতে পারতো।
কেন এমন ভুলটা হলো ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোর? মূলতঃ নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার পর ডিএল মেথড দিয়ে হিসাব কিতাব করতে যাওয়ার পরই এই ভুলটা তারা করে ফেলেন। রেফারি জেফ ক্রো হিসেব করেন নিউজিল্যান্ডের পুরো ২০ ওভার ধরে। অথচ নিউজিল্যান্ড ব্যাট করেছে ১৭.৫ ওভার।
২০ ওভার ধরে হিসেব করার ফলেই বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যটা দাঁড়িয়েছিল ১৪৮ রানের। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাট করতে নামার পরই তাদের বোধোদয় ঘটে। এরপর ১৭.৫ ওভার ধরে নতুন হিসেব করে দেখা গেলো বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭০ রানের।
বাধ্য হয়েই নতুন হিসেব মেনে নিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে গত বছর অক্টোবরে ডিএল মেথডের নতুন ৪.০ ভার্সন রিলিজ করা হয়ে। সেই নতুন ভার্সন অনুসারে ১৭০ রানের যে লক্ষ্য দাঁড় করানো হয়েছে তাও ঠিক নয়। নতুন ভার্সন অনুসারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭১ রান।
বারবার এই যে লক্ষ্য পরিবর্তন করা হলো, তাতে নিশ্চিত অর্থেই ধরে নেয়া যায়, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বাংলাদেশ দলই।