বিচার বিভাগকে সহযোগিতা করতে সরকারের কোনো কার্পণ্য নেই উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচার বিভাগের কাছে একটি চাওয়া থাকবে, তা হলো বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পান। তারা যেন মামলার দীর্ঘসূত্রতার অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পান।
শনিবার (৬ মে) ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজিত রিফ্রেসার কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের জুডিসিয়াল ডিসিপ্লিন মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, জুডিসিয়াল সিদ্ধান্ত মেনে না চললে জুডিসিয়াল অ্যানার্কি তৈরি হতে পারে। এতে সমাজ ও দেশের ওপর এর ইমপ্যাক্ট ভয়াবহ হবে। নিশ্চয়ই আমরা এই অ্যানার্কি চাই না।
তিনি আরও বলেন, দেশের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত মামলাজট কমানোর দায়িত্ব আমাদের কাঁধে নিতে হবে। এই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে জনগণ যাতে ত্বরিত সুষ্ঠু বিচার পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অন্য যে কোনো সরকারের চেয়ে বিচার বিভাগের জন্য বাজেট বাড়ানো হয়েছে বলে জানান আনিসুল হক। তিনি বলেন, বিচারকদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এখন বিচারকদের দায়িত্ব মানুষ যেন দ্রুত বিচার পায়, সেটা নিশ্চিত করা।
প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী বলেন, সহকারী জজ থাকা অবস্থায় তারা সবাই এই ইনস্টিটিউটে মানসম্পন্ন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ করে গেছেন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে আবারও নতুন প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। একটি সুদক্ষ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দ্রুত মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের জন্য এমনটিই হওয়া উচিত। কিন্তু অন্য সরকারের আমলে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের কী অবস্থা ছিল, তার ইতিহাস অনেকেরই জানা। এক কথায় বলা যায়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক কোনো প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বিচারকদের জন্য এই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানান মন্ত্রী।
আনিসুল হক বিচারকদের আশ্বস্ত করে বলেন, প্রশিক্ষণের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি বিদেশে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধান লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। জাতির পিতা তার এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিজয়ের মাত্র ১০ মাস ১৮ দিনের মাথায় অনন্য সংবিধান উপহার দেন।
তিনি বলেন, এই সংবিধানের বৈশিষ্ট্য হলো প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, সবাই আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী।
পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আদালতের বিভিন্ন সমস্যার যুক্তিসঙ্গত সমাধানসহ বিচারকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো অপরিহার্য।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা।