২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি ভিন্ন স্বরের নাম ‘দেয়ালের দেশ’। মিস্ট্রি আর রোমান্স ঘরানার এই সিনেমা তার আবহ, চরিত্র আর গল্প বলার অভিনব পদ্ধতিতে জয় করেছে দর্শক–সমালোচকের মন। সিনেমাটির কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলী ও শরিফুল রাজ। পরিচালনায় ছিলেন নবাগত নির্মাতা মিশুক মনি। এবার প্রশংসিত এই সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে। আগামীকাল বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে (অর্থাৎ ১৭ জুলাই) চরকিতে দেখা যাবে সিনেমাটি।
ফলে শুধু দেশের দর্শকেরাই নন, বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা বাংলা সিনেমাপ্রেমীরাও সহজেই উপভোগ করতে পারবেন সিনেমাটি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চরকির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়েছে সিনেমার ট্রেলার। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে মুক্তির দিনক্ষণ। ট্রেইলারের ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘জীবন আর সম্পর্কের মধ্যে মহাকালের মতো দাঁড়ানো এক মৃত্যুর দেয়াল।’ ‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছে নহর ও বৈশাখ নামের দুই চরিত্রকে কেন্দ্র করে। নহরের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শবনম বুবলী, বৈশাখ চরিত্রে শরিফুল রাজ।
এক অদ্ভুত প্রেম, যার সূচনা হয় হাসপাতালের মর্গে। মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা, সম্পর্ক আর আবেগ—এই জটিল অনুভূতির জগতে দর্শককে নিয়ে যায় সিনেমাটি। শুধু প্রধান দুই চরিত্রই নয়, সিনেমার অন্যান্য চরিত্রেও দেখা যাবে শাহাদাত হোসেন, জিনাত সানু স্বাগতা, আজিজুল হাকিম, সাবেরী আলম, শমপ্তি মাশুক, এ কে আজাদ সেতু এবং দীপক সুমনের মতো পরিচিত মুখ। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির সময়ই আলোচনায় আসে ‘দেয়ালের দেশ’। দর্শকেরা সিনেমাটির গল্প, চিত্রগ্রহণ, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, সংলাপ এবং অভিনয়ের প্রশংসা করেন। সংবাদ সম্মেলনে বুবলী জানিয়েছিলেন, গল্পটি তাঁর এতটাই ভালো লেগেছিল যে ‘নায়িকা’ নয়, চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এ ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল।
কারণ, তখনো আমি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা। আর এই ছবিতে আমাকে নায়িকা নয়, চরিত্র হয়ে উঠতে হয়েছে।’ ‘দেয়ালের দেশ’ সিনেমার দৃশ্য। চরকির সৌজন্যে বুবলী আরও বলেন, ‘অনেকে তাঁদের কাজকে ব্যতিক্রম বলেন, কিন্তু “দেয়ালের দেশ” আসলেই ভিন্ন ছিল। নহর চরিত্রটির মতো কিছু আগে কখনো করিনি। এই সিনেমা অনুদানের সিনেমা নিয়ে প্রচলিত ট্যাবুটাও ভেঙে দেবে।’ সিনেমাটি ২০২১ সালে পায় সরকারি অনুদান। গল্প, চিত্রনাট্য ও সংলাপ—তিনটিই লিখেছেন নির্মাতা মিশুক মনি নিজেই। নিজের প্রথম চলচ্চিত্রেই মুনশিয়ানা দেখিয়ে তিনি আলাদা করে নজর কাড়েন। চরকিতে সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে—এ খবর নিয়ে উচ্ছ্বসিত নির্মাতাও।
প্রথম আলোকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় মিশুক মনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে “দেয়ালের দেশ” সিনেমার দর্শক আর চরকির দর্শকের রুচির মিল আছে। সিনেমা রিলিজের পর থেকে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া, ইনবক্স কিংবা সামনাসামনি বলছিলেন, “ভাই, এটা কবে দেখা যাবে?” খানিকটা দেরি হলেও ওটিটিতে আসছে, এটা আমার জন্য স্বস্তির।’ মিশুক মনি আরও বলেন, ‘প্রেক্ষাগৃহে সীমিত দর্শক দেখলেও এখন দেশ–বিদেশের সিনেমাপ্রেমীরা এটা দেখতে পাবেন। আমি চাই, সিনেমাটি ছড়িয়ে পড়ুক—রুচিশীল দর্শকের মধ্যে, যাঁরা শুধু বিনোদন নয়, গল্পে প্রশ্ন খোঁজেন।’ যাঁরা সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে দেখে পারেননি, তাঁদের জন্য এটা নতুন সুযোগ। আবার যাঁরা সিনেমাটি আগেই দেখেছেন, তাঁদের জন্য এটি দ্বিতীয়বার দেখার উপলক্ষও বটে। বাংলা সিনেমায় ভিন্ন স্বাদের এই নির্মাণ এবার নতুন করে ছড়িয়ে পড়বে বৃহৎ পরিসরে।