নারায়ণগঞ্জ খানপুরে কিশোর গ্যাং সিরাজ বাহিনীর ছিনতাই চাঁদাবাজি অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী-র্যাবের হস্তক্ষেপ জরুরী।
নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোরদের নিয়ে গড়ে উঠছে অপরাধ সাম্রাজ্য। বরফকল এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সিরাজ গ্রুপের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলছে, এই এলাকায় প্রায় অর্ধশত কিশোর গ্যাং সক্রিয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুনাখুনি, মাদক, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। স্থানীয় কিছু বড় ভাইদের শেল্টারে সিরাজ গ্যাং প্রথমে তুচ্ছ এবং পরে বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় অবস্থিত নগর খানপুর,বরফকল ঘাট ও চৌরঙ্গি পার্কের গেইট সংলগ্ন রাস্তা কিংবা দোকানপাট এখন কিশোরগ্যাং সিরাজ ও তার বাহিনীর দখলে।
ইতিপূর্বে প্রেমিকার ফোন দিতে গিয়ে কিশোরগ্যাংয়ের হাতে যুবক খুন ও দুই সাংবাদিকের উপর কিশোরগ্যাং সিরাজ বাহিনীর হামলার পরও কেনো প্রশাসন কিশোরগ্যাং সিরাজ বাহিনীর উপর যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তা এলাকাবাসীর বোধগম্য নয়। যার ফলে প্রতিনিয়ত বরফকল ঘাটে নদী পারাপার হওয়া মানুষ চুরি, ছিনতাই ও ইভটেজিংয়ের সম্মুখিন হচ্ছে। শুধু ঘাট পারাপার হওয়া মানুষই নয় ঘাটের ঠিক পাশেই চৌরাংঙী পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটক ও এলাকাবাসী স্বীকার হচ্ছে চুরি ছিনতাই ও ইভটিজিং এর মত জঘন্যতম অপরাধে। গত ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই ফয়সাল নামে এক কিশোর শহরের খানপুর বরফকল এলাকায় বান্ধবীর মোবাইল ফোন ফিরিয়ে দিতে গেলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পাঁচ কিশোর বাহিনীর একটি কিশোর গ্যাং। গত ২০২২ সালের ১৩ই জুন বিকালে দুইজন সাংবাদিকের উপর কিশোর গ্যাং সিরাজ বাহিনীর ২০/২৫ জন সদস্য হামলা চালায়। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মাঠে খেলার কথা, সৃজনশীল কাজের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা—সেই বয়সের কিশোররা এখন ছুরি-চাকু, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাস্তানি করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। রাস্তাঘাটে ছিনতাই করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। বাধা দিলে রক্তারক্তি, খুুনাখুনি করে। প্রশাসনের নিকট এলাকাবাসী,ঘাটের স্থানীয় দুকানদার এবং পার্ক কর্তৃপক্ষের একটাই দাবী যাতে অতি শীঘ্রই বরফকল ঘাটের কিশোর গ্যাং সিরাজ বাহিনীকে নির্মূল করা হয়। অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে দুর্নীতি, অপরাধ ও অপরাধের নানা উপাদান রয়েছে, কিশোররা তার বাইরে নয়। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে। এলাকায় খেলার মাঠ নেই। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চাও নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তারকাখ্যাতি, হিরোইজম, ক্ষমতা, বয়সের অপরিপক্বতা, অর্থলোভ। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। পারিবারিক শিক্ষার অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। আবার মাদক বিক্রেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত অনেকেই নিজের সামান্য লাভের জন্য কিশোরদের অপরাধজগতে টেনে নেন। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করেন। কিশোরদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের গ্যাং কালচার গড়ে উঠছে। র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। অতীতে এ বিষয়ে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। সম্প্রতি র্যাবের পক্ষ থেকে অনেক কাজ করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক গ্যাং সদস্যদের সংখ্যা, নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।