ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধের জন্য স্ত্রী ইসরাত জাহানের কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ক্রিকেটার মো. আল-আমিন হোসেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় স্ত্রীকে মারধর করেন আল-আমিন।
যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় করা মামলার এজাহারে এমন অভিযোগ করেন আল-আমিনের স্ত্রী ইসরাত জাহান।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) ইসরাত জাহান মিরপুর মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে আল-আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। তার লিখিত অভিযোগটি শুক্রবার মামলা আকারে নথিভুক্ত করে পুলিশ।
একইদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান এ মামলার এজাহার গ্রহণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২১ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে ক্রিকেটার আল-আমিন হোসেনের সঙ্গে ইসরাত জাহানের বিয়ে হয়। এ দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে এ পর্যন্ত সংসারকালে পারিবারিক বিষয় নিয়ে আল-আমিন তার স্ত্রী ইসরাতের কাছে ফ্ল্যাটের মূল্য পরিশোধ বাবদ ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।
‘ইসরাতের বৃদ্ধ বাবা দাবি করা যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আল-আমিন তাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেন। বেশ কয়েকবার মারধর করার পর তিনি (ইসরাত) আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেন। কিন্তু দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পারিবারিকভাবে আপস-মীমাংসা করে নেয়। এতে আল-আমিন শান্ত না হয়ে দিনের পর দিন তার ওপর অত্যাচারসহ শারীরিক নির্যাতন অব্যাহত রাখে।’
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৫ আগস্ট আল-আমিন তার স্ত্রীর কাছে যৌতুকের দাবি করা টাকা নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। তার স্ত্রী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। আল-আমিন জানান, তার (ইসরাত) সঙ্গে সংসার করবে না, তাকে তালাক দেবেন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দেন। পরে ইসরাতের চাচা তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলে আল-আমিন তার সঙ্গে আগের মতো আচরণ করতে থাকেন।
মামলার পর উধাও আল আমিন
এদিকে, মামলার পর শুক্রবার রাতেই মিরপুর-২ নম্বর রোডের বাসা ছেড়েছেন ক্রিকেটার আল আমিন। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে তৎপরতা শুরু করলেও খুঁজে পাচ্ছে না।
আল-আমিনের স্ত্রী ইসরাত জাহানের মামা মো. সাঈদ বলেন, ঘটনার পর থেকেই আল-আমিন পলাতক। বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আর বাসায় ফেরেননি। তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে পুলিশ খুঁজলেও এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল রানা জানান, যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন, মারধর ও বাচ্চাসহ বের করে দেওয়ার অভিযোগে এজাহারভুক্ত আসামি আল-আমিন হোসেন পলাতক। তার বাসায়ও পাওয়া যায়নি। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে মারধরের পর বের করে দিয়ে অন্য মেয়েকে আল আমিন বাসায় তুলেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বলেন, ‘ওই মেয়ের সঙ্গে আল-আমিনের বিয়ে হয়েছে কি না, তা জানি না। কাবিননামাও পাইনি। তবে ওই মেয়ের সঙ্গে আল-আমিনের অনেক ছবি আছে।’
তিনি বলেন, ‘দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো? আমার এখন একটাই চাওয়া, বাচ্চাদের নিয়ে যেন ভালোভাবে সংসার করতে পারি।’
ইসরাত জাহানের মামা মো. সাঈদ বলেন, দুই বছর ধরে ক্রিকেটার আল-আমিন হোসেন আমার ভাগনিকে নির্যাতন করতেন। এর আগেও থানায় নির্যাতনের অভিযোগে জিডি করা হয়েছিল। গত ২৫ আগস্ট মারধর করে বাসা থেকে বাচ্চাসহ ইসরাতকে বের করে দেন। এরপর মিরপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ইসরাত।
এর আগে বৃহস্পতিবার যৌতুকের জন্য মারধর ও বাচ্চাসহ বের করে দেওয়ার অভিযোগে ক্রিকেটার আল-আমিন হোসেনের বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন তার স্ত্রী। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।