বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে হতাহতদের কাহিনি শোনালেন হতাহতদের স্বজনরা অগ্নিসন্ত্রাসের বীভৎস কাহিনি শোনালেন হতাহতদের স্বজনরা অগ্নিসন্ত্রাসে হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নেন। বাসে উত্তরা থেকে শনির আখড়া যাচ্ছিলের ওসমান নামে এক যাত্রী। সায়েদাবাদ পার হতেই হঠাৎ করে দেখতে পান বাসের ভেতর ছোড়া একটি বোতল থেকে আগুন জ্বলে উঠল। কিছু বোঝার আগেই পুরো বাস ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। কোন পথে বের হবেন, খুঁজে পাচ্ছিলেন না ওসমান। আগুনে তার শরীর পুড়ছিল। উপায় না দেখে পেছনের কাচ ভেঙে কোনোমতে রক্ষা পান। তবে এরমধ্যেই তার শরীরের ৩০ ভাগ পুরে গেছে। এখন তিনি যন্ত্রণায় হাসপাতালে ছটফট করছেন। রোববার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মানববন্ধনে কাঁদতে কাঁদতে বীভৎস এ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ওসমানের মেয়ে সানজিদা। তিনি বলেন, আমার বাবাসহ বাসে যারা ছিলেন, তারা তো কোনো দোষ করেননি। তাহলে কেন তারা আজ বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে আহত হয়ে হাসপাতালে ছটফট করে রাত কাটাবেন? আমরা কি বিচার পাব না? ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাসে আহত-নিহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ নামে একটি সংগঠন। আহত অনেকে এতে উপস্থিত ছিলেন। হতাহতদের পরিবারের সদস্যসহ স্বজনরা অগ্নিসন্ত্রাসের বীভৎস কাহিনি তুলে ধরেন। তাদের কাহিনি শুনে উপস্থিতরা সবাই হতবাক হয়ে যান। আর্তনাদ আর কান্নায় শহীদ মিনার এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। ২০১৫ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি মাফরুফা বেগম তার পরিবার চার সদস্য নিয়ে রাতের বাসে করে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। সবাই ছিলেন ঘুমে। কক্সবাজার পোঁছানোর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে হঠাৎ করে বাসে পেট্রোল বোমা মেরে বাসে আগুন লাগিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে পুরো বাস আগুনের লেলিহান শিখায় ছেয়ে যায়। মাফরুফা বলেন, সেই বাসে আমি ও আমার মেয়ে বেঁচে ফিরতে পারলেও আমার স্বামী ও আমার এক ছেলে পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। আজও আমার সন্তান-স্বামীর আর্তনাদ শুনতে পাই। তিনি বলেন, আমার সন্তানের মা মা ডাক আমাকে এখনো ঘুমাতে দেয় না। সেদিন আমার স্বামী সন্তানসহ সাতটি তাজা প্রাণ শেষ হয়ে যায়। আজ আমি নিঃস্ব। পৃথিবীর কোনো দেশে ক্ষমতার কারণে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটে কি না, আমার জানা নেই। আমি এর বিচার চাই। সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার মজিদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার বাড়ি ঠাকুরগাঁও। আমি ভ্যান চালাই। রাজনীতি বুঝি না। বিএনপি-জামায়াত বুঝি না। কাজ করি, ভাত খাই। ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হলে হামলার শিকার হই। তিনি বলেন, অন্যান্য দিনের মতোই ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ করে কিছু সন্ত্রাসী এসে আমার ভ্যানগাড়ি ভেঙে দেয়। মারধর করে হাত ভেঙে দেয়। ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি সন্ত্রাসীদের মদদদাতা। তিনি বলেন, এখন আমি কাজ করতে পারি না। সংসার চালাতে পারি না। প্রহতাহতদের স্বজনরা বিচার চাই। নরসিংদীর আনু হোসেনের স্ত্রী পারভিন বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর আমার স্বামীর হাত-পা কেটে তাকে হত্যা করে। দুই সন্তান নিয়ে আমি মানবেতর জীবনধারণ করছি। আমার সন্তানেরা ওই সন্ত্রাসীদের কারণে ১০ বছর ধরে বাবার আদর থেকে বঞ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত বিচার চাই। অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ সংগঠনের আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন বাবুলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্পচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তসহ আরও অনেকে।