অনেক ধার্মিক ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক ভোট না দেওয়াকেই সঠিক ও শ্রেয় মনে করেন। তাদের কাছে একটি ভুল ধারণা ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করেছে যে, প্রচলিত রাজনৈতিক নির্বাচন ও ভোট দেওয়ার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ধার্মিক ও অভিজাত শ্রেণির লোকজনের কাছে নানা কারণে রাজনীতি করা, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এবং ভোট দেওয়া বৈধ নয়! অনস্বীকার্য যে, এ ধারণার ভিত্তি অবশ্যই ভালো নিয়তের ওপর। কিন্তু এ ধারণা নিঃসন্দেহে ভুল এবং দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভোটের দায়বদ্ধতার বিষয়ে কিয়ামতের দিন প্রত্যেককেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে এক হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই (কেয়ামতের দিন) তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। ’ (সহিহ বোখারি ও মুসলিম) ভোট দেশের প্রতিটি নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট ব্যক্তির নিজস্ব মতামত কিংবা জনমত প্রতিফলনের একটি গণতান্ত্রিক মাধ্যম ও পদ্ধতিবিশেষ। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ভোটের প্রয়োজন হয়। রাজনীতিতে ভোট এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একজন প্রার্থী গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার ব্যবস্থার কোনো না কোনো পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
ভোট প্রদানের অর্থ হল- দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে নিজের সমর্থন ও সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা দলকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত করা। তবে এক্ষেত্রে ইসলামে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। কারণ আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠা করো। ’ (সূরা আত তলাক : ২) অন্যত্র আরো ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও। ’ (সূরা আন নিসা : ১৩৫) যেহেতু ভোট একটি রায় বা সাক্ষ্য তাই এ ভোট প্রদানের ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হতে হবে। ভোট প্রদান বা সমর্থনের মধ্য দিয়ে একটি দেশ ও জাতির ভবিষ্যদ্ভাগ্য নির্মিত হয়। সুতরাং এসব বিষয় মাথায় রেখে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্মানিত ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।