রাজধানীর বুকে নামে বেনামে ঝুলছে অবৈধ হাসপাতালের সাইনবোর্ডে, চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বানিজ্য
: মাহবুব আলমঃ
যাত্রাবাড়ী থানার আওতাধীন শনির আখরায় অনুমোদন বিহীন অবৈধ মর্ডান কিউর হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটে রোগীরা ।দফায় দফায় অভিযান পরিচালিত হয় এসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছুই হয় না। কোনোভাবেই কমেনা অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ব। রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে এসব অবৈধ হাসপাতালের ছড়াছড়ি,এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হয় জীবন-মরণ সংকটে । স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হুঁশিয়ারি-অভিযান সত্ত্বেও কিভাবে এসব হাসপাতাল নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশজুড়ে মোট নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ১৩ হাজার ৬১১টি। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে আরও ২২ হাজার ৪৭২টি। এছাড়া নতুন করে হাসপাতাল তৈরির জন্য আবেদন রয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৫টির। কিন্তু এর বাইরেও অন্তত কয়েক হাজার বেসরকারি হাসপাতাল চলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে ভাড়াটিয়া ডঃ দিয়ে এখানে ভূয়া ডাক্তারও রয়েছে। বেশিরভাগেরই নেই পর্যাপ্ত দক্ষ চিকিৎসক, উন্নতমানের চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা পরিবেশ । অনেক হাসপাতালেই করা হয় গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারও, যার খেসারত দিতে হয় রোগীদের অপমৃত্যু দিয়ে । সম্প্রতি হাতের অপারেশন করতে আসা পাঁচ বছরের শিশু মাইশার পেট কাটার ঘটনায় আলোচনায় আসে রাজধানীর মিরপুর রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি। ওই ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় শিশু মাইশার। পরে জানা যায়, এই হাসপাতালটির বিএমডিসি সনদই নেই। নিয়মবহির্ভূত ভাবেই চালানো হচ্ছিল এ হাসপাতাল। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৪ ডিসেম্বর হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময় অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিদপ্তরের পরিদর্শন কার্যক্রমের চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত নয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এছাড়াও পরিদর্শন টিম প্রতিষ্ঠানে অবৈধ কাজ এর প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এক আলম মেমোরিয়াল হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা করা হলে কী হবে, রাজধানীর আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব ভূইফোর হাসপাতালে রয়েছে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলছে হাজারো অনুমোদনহীন অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল। এমনই আরেকটি হাসপাতাল রাজধানীর ডেমরা আমুলিয়ার আইচি হাসপাতাল। স্কাইভিউ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এমন একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে হাসপাতালটির সামনে, যেখানে ইমার্জেন্সিতে ডাক্তারের ভিজিট মাত্র ৫০ টাকা। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখেন মাত্র ২০০ টাকায়। ডেমরার আমুলিয়ার মেন্দিপুরের (মাইক্রোস্ট্যান্ড) এ হাসপাতালটির এমন প্রলুব্ধকরণ বিজ্ঞাপনে আকষ্ট হয়ে অসহায় সাধারণ রোগীরা একটু সুস্থতার আশায় চিকিৎসা নিতে যান সেখানে।এমনও তথ্য মিলেছে দালাল দিয়ে রুগী সংগ্রহ করার।আর তখনই শুরু হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিকিৎসার নামে পৈশাচিক আচরণ। গত সেপ্টেম্বরে এমনই এক রোগী মোছাম্মৎ সেলিনা বেগম অভিযোগ করেন, জরায়ুর টিউমার অপারেশনের জন্য হাসপাতালটিতে ভর্তি হলে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুলতানা পারভীন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। চার রকমের আলট্রাসনোগ্রামই করানো হয় মোছাম্মৎ সেলিনা বেগমের। সব কিছু চূড়ান্ত করার পরই নেওয়া হয় তাকে অপারেশন থিয়েটারে। পরিকল্পনা মতো শুরু হয় অস্ত্রোপচারও। কিন্তু আধা ঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটারের বাইরে এসে ডা. সুলতানা পারভীন সেলিনা বেগমের পরিবারকে জানায়, ‘আমরা রোগীর পেট কেটেছি। কিন্তু এই অপারেশন আমার পক্ষে সম্ভব না। সেলাই করে দিচ্ছি। সেলাই শুকালে অন্য জায়গায় নিয়ে অপারেশন করান।’ হতবিহ্বল বেচারি সেলিনার স্বামী আব্দুল মজিদের তখন মারাত্বক দিশেহারা অবস্থা! ভয়ংকর কথা পেট কাটার পর বলছে অপারেশন করা যাবে না!!! এও হয় পৃথিবীর কোথাও? এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের খারাপ আচরণের শিকার হতে হয় এই প্রতিবেদককে। কুমিল্লা থেকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পায়ের হাড় ভেঙে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি হতে আসেন রিক্সাচালক রমিজ কিন্তু ডাক্তারের রাউন্ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ওই দিনের মতো কোনো সিট খালি নেই বলে জানায় জরুরি বিভাগ থেকে। পরিবার নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বসে ছিলেন, তখনই যেন আশার আলো হয়ে সামনে আসেন শিকদার হোসেন নামের এক ব্যক্তি(দালাল)। বলেন, এখানে সিট নেই তো কী হয়েছে। চলুন আমার পরিচিত এক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। খুবই কম টাকায় চিকিৎসা করাতে পারবেন ওখানে। বলে পাশেই একটা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায় রমিজকে। কিন্তু ভর্তির পরপরই অস্ত্রোপচার করার কথা বলে লম্বা একটি বিল ধরিয়ে দেয় রমিজের পরিবারকে। যার ব্যয় মেটানোর টাকা সঙ্গে থাকা তো দূরের কথা, গ্রামের বসতবাড়ি বিক্রি করেও মেটাতে পারবে কি না সন্দেহ। এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বানিজ্য , কিন্তু তবুও নেই জীবনের নিশ্চয়তা। কি বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর !? নিবন্ধনবিহীন বেসরকারি এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টক সেন্টার,ব্লাডব্যাংক বন্ধে গত মনে মাসে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে তিনদিনে দেশজুড়ে ৫৩৮টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে খোদ রাজধানীতেই রয়েছে ১৬৪টি। দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৮৫০টি অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক বন্ধ করে দেয়। এই অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয় গত ২৯ আগস্ট। বন্ধ হওয়া হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ২০টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) বলেন, প্রতারণা বন্ধে আমাদের নানা ধরনের উদ্যোগ চলমান। অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান ও সাইনবোর্ডে লাইসেন্স নম্বর লেখা বাধ্যতামূলক কর