পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনেকদিন থেকে ফুচকা বিক্রি করেন কপিল দেব শাহ। সেখানে প্রায় সবার কাছেই পরিচিত মুখ তিনি। কিছুদিন আগে দুর্ঘটনায় হাত ভেঙে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় তার ব্যবসা। এ অবস্থায় সংসার চালানোর দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছে মেয়ে কবিতা। নবম শ্রেণির ছাত্রীর এমন উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, পাঁচজনের সংসার কবিতাদের। মহামারিতে লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ব্যবসা করতে পারেননি তার ফুচকা বিক্রেতা বাবা। ফলে অভাব দেখা দেয়। একপর্যায়ে দুধের ব্যবসা শুরু করেন তারা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দুধ দিয়ে আসতেন কপিল। কিন্তু তাতেও অভাব যাচ্ছিল না।
এর মধ্যে লকডাউন উঠে গেলে আবারও ফুচকা বিক্রি শুরু করেন কপিল। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলে যায়। পরিস্থিতি যখনই একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছিল, তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। মাস দেড়েক আগে বোলপুর চৌরাস্তা এলাকায় একটি অটোর সঙ্গে ধাক্কা লাগে কপিলের। এতে তার হাতের হাড় ভেঙে যায়। এরপর ৫০ হাজার রুপির বেশি খরচ করে হাতে প্লেট বসাতে হয় তাকে। ধারদেনা করে চিকিৎসা করানোয় সংসারে আর্থিক টানাটানি আরও বেড়ে যায়।
কিন্তু কপিলকে তিন মাস কোনো কাজ করতে নিষেধ করেছেন চিকিৎসকরা। মানে, তার ফুচকা বিক্রি বন্ধ। তাহলে উপায়? সংসারে অভাব-অনটন দেখে একপর্যায়ে নিজেই ফুচকা বেচতে নেমে পড়ে ছোট্ট কবিতা।
ছোটবেলা থেকে বাড়িতে ফুচকা তৈরি ও বাবাকে তা বিক্রি করতে দেখেছে নবম শ্রেণির এ ছাত্রী। তাই বিষয়টা রপ্ত করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি তাকে। এখন প্রতিদিন বিকেলে বোলপুরের বাঁধগোরার সবুজপল্লী থেকে ফুচকার গাড়ি ঠেলে শান্তিনিকেতনের গেটের সামনে যায় কবিতা। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফুচকা বিক্রি করে আবার বাড়ির পথ ধরে।
এভাবে এক মাসের বেশি সময় ধরে ফুচকা বিক্রি করছে কবিতা কুমারী। এ ব্যবসায় এরই মধ্যে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে সে। কিন্তু এত কিছুর পরেও পড়াশোনা বন্ধ করেনি মেয়েটি।
কবিতার কথায়, করোনার কারণে এখন অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। আমিও সেভাবেই করছি। মাঝেমধ্যে টিউশনে যাই। আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা। সে জন্য ফুচকা বিক্রির পাশাপাশি যতটা পারছি পড়াশোনায় সময় দিচ্ছি।
কবিতার বাবা কপিল দেব শাহ বলেন, মেয়েকে ফুচকা বিক্রি করতে হবে কখনো ভাবিনি। কিন্তু সংসারের যা অবস্থা, সে ফুচকা বিক্রি না করলে আর উপায় নেই।