দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, নির্যাতনের নানান অভিযোগে হিন্দু নারীদের মধ্যে স্বামী থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা বাড়ছে।
বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। বিধবা নারীদের সম্পত্তির ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নও এখন উঠছে।
ঢাকার লক্ষীবাজার এলাকায় হিন্দু এক প্রেমিক যুগল তাদের পরিবার রাজি না হলেও ঢাকঢোল বাজিয়ে শাস্ত্র মেনে বিয়ে করেছিলেন। পরে পরিবার মেনে নিয়েছিল।
কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই সেই সংসারে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সন্তান নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে। স্ত্রী সন্তান নেয়ার ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে থাকলে তাঁকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।
সেখানে কন্যা শিশু জন্ম দেয়ার পর সেই নারী স্বামীর বাড়িতে ফেরত এসে আশ্রয় পাননি।
সেই থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকার লক্ষীবাজার এলাকায় তিনি স্বামী থেকে আলাদা হয়ে কন্যা নিয়ে বসবাস করছেন।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলছিলেন, তাদের ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা না থাকায় আমৃত্যু তাঁকে একা থাকতে হবে, এটা মেনে নেয়া ছাড়া তাঁর কোনো উপায় নেই।
"আমি স্বামীকে ডিভোর্স দিতে পারছি না। যদিও সালিশের মাধ্যমে আলাদা হওয়ায় তিনি আমাকে ভরনপোষণের জন্য মাসে নয় হাজার টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু এটাতো জীবন নয়। আমার মেয়ে আমাকে বলে,আমার আব্বু কেনো সাথে থাকে না? স্কুলে বন্ধুদের সকলের আব্বু আছে। মেয়ের এমন কথায় আমার খুব কষ্ট হয়।"
একবার বিয়ে হলে যেহেতু বিচ্ছেদের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেই সূত্র ধরে নারীদের দ্বিতীয় বিয়ে করারও অধিকার নেই।
অন্যদিকে হিন্দু পুরুষদের স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই একাধিক বিয়ে করার সুযোগ রয়েছে।
হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত নির্যাতিত নারীদের আইনী সহায়তা দেন। তিনি বলেছেন,অনেক নারী নির্যাতিত হয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে স্বামী থেকে আলাদা থাকেন। কিন্তু এই ব্যবস্থার আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না।
তিনি আরও বলছিলেন, "ধর্ম অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন থাকতে হবে আমৃত্যু। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, শাস্ত্র বা মন্ত্র তাদের জায়গায় আছে। আর বাস্তবতা হচ্ছে, ঘরে স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধও আছে।
স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে একা থাকছে। এই সুযোগে স্বামী আরেকটা বিয়ে করছে। এটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।"