আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সোমবার (২ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান। এর আগে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো যাবে না বলে রোববার মতামত দেয় আইন মন্ত্রণালয়। খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। নির্বাহী আদেশে তার দণ্ড স্থগিত রয়েছে। লিভার, হৃদযন্ত্র ও কিডনির সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বেগম জিয়ার বেশিরভাগ সময়ই কাটছে এখন হাসপাতালে। তার স্থায়ী মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদন করা হয় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে যেহেতু আইনি জটিলতা রয়েছে, তাই সেই পত্র (বেগম জিয়ার পরিবারের দেওয়া) আমি আইন মন্ত্রণালয় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম তাদের মতামতের জন্য। যে মতামতটা আসছে সেই মতামত বোধহয় তাদের (খালেদা জিয়ার পরিবার) পক্ষে আসেনি। এটা (চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো) দেওয়া সম্ভব নয় বলে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জানিয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের আর কিছু করণীয় নেই বলে আমি মনে করছি। এ সিদ্ধান্ত কি খালেদা জিয়ার পরিবারকে জানিয়ে দেওয়া হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ওনারা যদি জানতে চান আমরা অবশ্যই জানিয়ে দেবো। তবে এরই মধ্যে উনি জেনে গেছেন। তাদের কোনো কিছু জানার থাকলে, কথা বলতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত যেটা সেটা পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত… ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট এটা তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। একটা যদি অঘটন ঘটে তার বিচার হয়, সেটা আপনারা সবসময় দেখে আসছেন। আমাদের আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সেখানে আমাদের কর্তৃত্ব নেই। রাষ্ট্রপতি কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারে, এটাই তো তারা ইঙ্গিত করছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় যে মতামত দিয়েছে, সেটাই আপনাদের জানিয়ে দিয়েছি। এর বাইরে আমাদের কিছু করণীয় নেই। হাজী সেলিমসহ আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এ সুবিধা (বিদেশে চিকিৎসা) নিয়েছেন- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাজী সেলিম কিন্তু দণ্ডিত নন। তার বিচার চলছে বিএনপি বলেছে তারা পরবর্তী সময়ে কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতি নেবে না- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রথম কথা হলো তারা তো অনেক কিছুই করেন যা আইনসিদ্ধ নয়, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন। সেগুলো আপনারা নিশ্চয়ই দেখে আসছেন। আবুজর গিফারী কলেজের সামনে রাস্তাঘাট বন্ধ করে কৃষক দল সমাবেশ করছে, তারা পুলিশের অনুমতি নেয়নি। সেক্ষেত্রে অনেক কিছুই দেখছি, তাদের আইন মেনে চলার জন্য বলছি। ‘আমাদের পরামর্শ সেটাই থাকবে, আইন যেন সবাই মেনে চলে। আইন না মেনে চললে জনদুর্ভোগ বাড়বে, জনদুর্ভোগ বাড়লে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর যা করণীয় সেটাই তারা করবে।’ বিএনপি বলেছে তারা চূড়ান্ত আন্দোলনে আছে। সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হবে। অনেকে সহিংসতার আশঙ্কা করছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কী- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না। আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করবো। ২০১৪ সালে বিএনপির সহিংসতা মানুষ এখনও ভোলেনি মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা যদি ওই ঘটনা আবার ঘটাতে চায়, তাহলে এদেশের জনগণ যা করার করবে। এদেশের মানুষ মনে করে তারা এ অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে ফিরবে না, এদেশ আলোকিত রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন তাই করবে।