রাজধানীর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে ২টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মাসুম জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের তিনদিন আগে টার্গেট ব্যক্তিকে (টিপু) হত্যা করার নির্দেশ পান। তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। তবে নেপথ্যের কারণ বা মদতদাতা কারা তা জানতে আরও তদন্ত প্রয়োজন। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল শুটারকে দ্রুত গ্রেফতার করা।
ডিবির এই মুখপাত্র আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানান, হত্যাকাণ্ডের তিনদিন আগে শুটার মাসুম ও তার এক সহযোগী হত্যা করার জন্য টিপুর নাম পান। আর তখন থেকে তিনি তার সহযোগীকে নিয়ে রেকি শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এজিবি কলোনির ভেতরে অবস্থান করছিলেন টিপুকে হত্যার জন্য। সেদিন সুযোগ না পাওয়ায় পরদিন হত্যা মিশন শেষ করেন তারা। কিলিং মিশনে ছিলেন মাসুম এবং তার সহযোগী ছিলে মোটরসাইকেল চালানোর দায়িত্বে। ঘটনার পরদিন একটি গাড়ি নিয়ে মাসুম জয়পুরহাট চলে যান।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্তে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওই গাড়ির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করার পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে শাহজাহানপুর থানাধীন আমতলা এলাকা থেকে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু তার ড্রাইভার মনির হোসেন মুন্না এবং দুই বন্ধু মিরাজ ও আবুল কালামকে নিযে এজিবি কলোনি কাচাবাজার সংলগ্ন গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে মাইক্রোবাসে করে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। বাসায় যাওয়ার পথে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার ড্রাইভার এবং রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতিকে গুরুতর জখম করে। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও রিকশা আরোহী প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় শাহজাহনপুর থানায় একটি মামলা হয়। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে।
সংবাদ পেয়ে মাসুম দ্রুত টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে টিপুকে অনুসরণ করে গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেন। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করেন তিনি। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেললাইনের আগে আমতলা রাস্তায় যানজটে আটকে পড়লে মাসুম গাড়ির চালকের পাশের আসনে বসা টিপুকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির মুখপাত্র বলেন, ঘটনার পর দুই বন্ধুর সহযোগিতায় নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে চলে যান শুটার মাসুম। পরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন টিপুর মৃত্যুর সংবাদ। একই সঙ্গে নিরপরাধ রিকশা আরোহী প্রীতির মৃত্যুর সংবাদও পান তিনি। এরপর মাসুম জয়পুরহাটে চলে যান। সেখানে সীমান্ত পার না হয়ে বগুড়ায় চলে যান। সেখানে তার অবস্থান নিশ্চিত হবার পর বগুড়া জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়।
কারা মাসুমকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, কারা কন্টাক্ট করেছে, তাদের কয়েকজনের নাম তিনি বলেছেন। টাকা নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, তার নামে মামলা তুলে নেওয়ার সুবিধার বিষয় থাকতে পারে।
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি, তবে কীসের ভিত্তিতে বলছেন মাসুমই টিপুকে হত্যা করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি, তিনি কিলিং মিশনে ছিলেন। ঘটনার পর ৫/৬ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হই, সেই কিলিং মিশনে তিনিসহ দুজন ছিলেন। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। পালানোর সময় তার কর্মকাণ্ড, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোটরসাইকেলের ব্যবহার—সব মিলিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করেছি।