আগামী ২৩ সালের এপ্রিলেই পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে -প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।
পদ্মা সেতুতে যথাসময়ে রেল চলাচলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পদ্মা সেতুর রেল অংশের নকশা জটিলতার অগ্রগতির তথ্য দিতে পারেননি প্রকল্পটির পরিচালক আফজাল হোসেন।
অন্যদিকে, ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৭০ শতাংশের কাছাকাছি দাবি করে প্রকল্প কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেছেন- ২০২৩ সালের এপ্রিলেই পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল করবে। যদিও পুরো রেল প্রকল্প নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
রোববার (২০ নভেম্বর) বাংলাদেশ রেলওয়ে ভবনে এসব তথ্য দেন পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।
প্রাকৃতিক সংকটের বদলে মনুষ্য সংকট আছে কিনা এ বিষয়ে আফজাল হোসেন বলেন, পদ্মা রেল সেতুর কাজ চলছে।
২০২৩ সালের মধ্যে পদ্মা রেল সেতুর কাজ শেষ হওয়া সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও তো ২০২৩ সাল আসেনি।
কী কী অনিশ্চয়তা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনৈতিকসহ বন্যা, ক্ষরা, দুর্ভিক্ষ এসব অনিশ্চয়তা রয়েছে।
মানুষ্যসৃষ্ট কী কী অনিশ্চয়তা রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন ঠিকাদার নিজেরাই সমস্যা। ঠিকাদার কাজ করলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
পদ্মা সেতুর রেল অংশের নকশা জটিলতার অগ্রগতি কী জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এর সমাধান হয়েছে।
এখন কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমস্যা হলো এখন ঠিকাদার। উনারা কাজ করলেই কাজ শেষ হবে।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর ঢাকা-মাওয়া অংশে ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আগামী ২৩ সালের এপ্রিলেই পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও পুরো রেল প্রকল্প নিয়ে কিছু অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন প্রকল্প পরিচালক।
নকশা জটিলতার সমাধান না করে প্রকল্প পরিচালকের চীন ভ্রমণ
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন গত ০৭ সেপ্টেম্বর চীন সফরে যান। ফেরেন ২৯ সেপ্টেম্বর। দেশের বাইরে ছিলেন ২২ দিন। সে সময় ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালকের দ্বায়িত্বে ছিলেন পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল জলিল।
সরকার যখন বৈদেশিক ডলার সাশ্রয়ের দিকে নজর দিয়েছে তখন নকশা জটিলতার সমাধান না করে তার বিদেশ সফর নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে, নকশা জটিলতার সমাধান হওয়ার তথ্য দিতেও রাজি হননি প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন ও প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল জলিল।
প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, ‘এ বিষয়ে একমাত্র প্রকল্প পরিচালকই জানাবেন। আমি তথ্য দিতে পারবো না। ’
যথাসময়ে উদ্বোধন না হওয়ায় কাঙ্খিত সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা যথাসময়ে উদ্বোধন না হওয়ায় কাঙ্খিত সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রকল্পের সময় বাড়লে ব্যয় বাড়ে। আবার ঋণ পরিশোধে সরকারের ওপর চাপও বাড়ে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে রেল যাওয়ার পর আরও যেসব সুফল এখনও বাকি আছে, সেগুলো রেললাইন চালু হওয়ার পর পাওয়া যাবে। এখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে অংশের শেষ হওয়ার কথা সেটি সেই সময়ের মধ্যে হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, এটি বুঝতে হবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের কাজ। এই সব কাজে নির্ধারিত যে সময় শেষ করার কথা থাকে, সে সময়ের মধ্যে শেষ না হলে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হবে।
এর আগে, গত ০১ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ‘ট্র্যাক কার’ চলানো হয়েছে। দুই ঘণ্টার যাত্রা শেষে পদ্মা সেতুর দক্ষিণে জাজিরার ভায়াডাক্টে দুপুর ১টার দিকে পৌঁছায়।
গ্যাংকারে এ সময় প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন এবং সেনাবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মেজর জেনারেল এস এম জাহিদ আফজাল উপস্থিত ছিলেন।
সে সময় ভাঙ্গা স্টেশন ম্যানেজার মো. শাহজাহান জানান, এই রেলপথের চার কিলোমিটার পাথরবিহীন এবং ২৭ কিলোমিটার পাথরসহ রেললাইন। এই রেললাইন ভাঙ্গার পুরোনো রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে (জিটুজি) পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া-রাজবাড়ী পর্যন্ত রেলপথটি ব্যবহার করে এসব অঞ্চলের মানুষ ঢাকার সঙ্গে সহজেই যাতায়াত করতে পারবে।