সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার এর হাতে এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষ থেকে উপহার তুলে দেন তাঁর সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান। এছাড়াও ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকেও ইউএনও এর হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়। এ সময় আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ইউএনও শুক্লা সরকার।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৫টি ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যানরা শুক্লা সরকারের অতীত কর্মকান্ড তুলে দেন। বিশেষ করে করোনা মহাকারীকালীন সময় শুক্লা সরকার এর অসমান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন।
বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ এর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তাঁর সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান।
বিদায়ী অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা আয়োজন করা এমপি সেলিম ওসমান এবং সংবর্ধিত হওয়া ইউএনও শুক্লা সরকার উভয়ের বক্তব্যে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক মরহুম আবুল জাহের এর কথা উঠে আছে। সকলেই তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
শুক্লা সরকার এর প্রশংসা করতে গিয়ে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমার তিনটি মেয়ে। দুজনকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য আমার চোখে পানি এসেছিলো। আজকেও আমার সেই দিনটির মত মনে হচ্ছে। আমি তাকে আটকে রাখতে পারবো না। তাকে যেতে দিতেই হবে। আজকে আমার চেয়ারম্যানদের যে প্রশংসা করা হয় সেটা শুধুমাত্র শুক্লা সরকারের কারণে। একটা টি আর কাবিখার অপব্যবহার হয়নি। বন্দর উপজেলার সত্যিকারের কতজন গরীব মানুষ আছে তা তিনি বলতে পারেন। আজকেও তিনি ২৬জন অসহায় মানুষের একজনকে একটি দোকান এবং ২৫ জনকে ছাগল দিয়ে আত্মনির্ভরশীল করার চেষ্টা করলেন। এই পরিবারগুলো আগামী এক বছরের মধ্যে ঘুরে দাড়াবে। গত দুই বছরে শুক্লা সরকারের ব্যাপারে কেউ একটা অভিযোগ করেনি। এ সময় তিনি বন্দর উপজেলার মিনারা সুলতানা, মৌসুমী হাবিব, পিন্টু বেপারী, নাহিদা বারী সম্পর্কে প্রশংসা করেন।
তিনি আরো বলেন, আজকে এখানে আমরা কেউ রাজনৈতিক কারণনে একত্রিত হইনি। শুধু মাত্র ভালোবাসা বিনিময়ের জন্য একত্রিত হয়েছি। করোনার সময় আমাদের ইউএনও চেয়ারম্যান মেম্বাররা যেভাবে কাজ করেছেন এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের কোথাও হয়নি। প্রায় পৌনে দুই বছর পর স্কুল গুলোকে খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাবধানতা অবলম্বন না করলে তৃতীয় ধাক্কা যে আসবে না সেটা কেউ বলতে পারবে না। আমেরিকার মত দেশেও স্কুল খুলে দেওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের করোনা দেখা দিচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে সাবধান হতে হবে। প্রতিটি স্কুলে গিয়ে স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে।
আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন আসছে। এই নির্বাচন চেয়ারম্যানদের মেম্বারদের। অনেকেই নির্বাচন করবেন। অতীতে কারা সাধারণ মানুষের পাশে ছিল এটা সাধারণ মানুষ জানে বুঝে। আপনাদের মাঝে যেন কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
তিনি বলেন, বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে মানুষ শুনতে শুনতে এখন আর বিশ্বাস করেন। শীতলক্ষ্যা সেতুর কারণে মদনগঞ্জ-মদনপুর পর্যন্ত ৪ লেন রাস্তা হবে। তখন কিন্তু বন্দরের চেহারা পাল্টে যাবে। শান্তিরচর সেখানে এখন ভূমিদস্যু পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে আমার কাছে একজন ধরা পড়ছে। খোঁজ নিয়ে জানলাম তাদেরকে একজন সরকারী কর্মকর্তা সহযোগীতা করে ছিলো। ভবিষ্যতের জন্য সাবধান হয়ে যান। ভবিষ্যতে এমন কাজ কেউ করলে আমি কোন ছাড় দিবো না। বন্দরে শান্তিরচর সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের মধ্যে বন্দরের মত এমন আর কোন উপজেলা হবে না। রাস্তার পাশে জায়গাগুলো দখল করা হচ্ছে। সাংবাদিক ভাইয়ের এসকল বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
তিনি আরো বলেন, রাজনীতিতে কোনদিন স্বরচিত কোন ইতিহাস বলা যায় না। আজকাল অনেকে স্বরচিত ইতিহাস বলতে শুরু করেছে কারণ সামনে নির্বাচন। আমার সাথে যারা কাজ করেছেন তাদের কাছে অনুরোধ রইলো কোন শত্রুতা নয়। আমি শত্রুর সাথে আলিঙ্গন করে বেঁচে আছি। সকলের কাছে অনুরোধ রইলো বন্দরে যেন কোন শত্রুতা সৃষ্টি না হয়।
বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ বলেন, বিগত দিনে ইউএনও শুক্লা সরকার বন্দরের জন্য যে অবদান রেখেছে শুক্লা সরকারের কথা বন্দরবাসী সারাজীবন মনে রাখবেন। আমি ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করেছি। আমিও এতোটা অর্জন করতে পারিনি যতটা মাত্র দুই বছরে আমাদের মাঝে শুক্লা সরকার অর্জন করেছে।
বিদায়ী ইউএনও শুক্লা সরকার ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসক হয়ে ফিরে আসবেন বলে প্রত্যাশা রেখে এমপি সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি সরকারের সামান্য একজন কর্মচারী। আজকে আমাকে যে সম্মান দেওয়া হয়েছে তা আমি সারাজীবন মনে রাখবো। আমার যখন এখানে বদলী হয় তখন আমি এখানে আসতে চাইনি। আমি ভয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার সেই ভয় দূর করেছেন আপনি। আর ভাবী আমাকে মায়ের মত আগলে রেখেছেন। আজকে আমাকে নিয়ে সবাই প্রশংসা করেছেন। কিন্তু আমি এই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য নই। আপনারা ভাল ছিলেন বলেই ভাল কাজ হয়েছে। আজকে অনেকে বলেছে শুক্লা করছে ইউএনও ভাল তাই ভাল কাজ হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা তা না। আমাদের পরিষদের সবাই ভাল ছিল বলেই ভাল কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এখানকার সাংবাদিকরাও আমাকে অনেক সহযোগীতা করেছে। বিপদে খোঁজ রেখেছেন মানসিক ভাবে সাপোর্ট দিয়েছেন। আমি আমার বন্দর উপজেলা বলতেই বেশি পছন্দ করি। আপনারা যারা আছেন তারা সবাই বন্দর উপজেলার জন্য কাজ করবেন। আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার জন্য আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন সৎ থেকে সম্মানের সাথে মরতে পারি। আমার কোন ব্যবহারে কখনো কেউ দু:খ পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ, বন্দর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু, নারী ভাইস চেয়ারম্যান সালিমা ইসলাম শান্তা, বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার, সহকারী কমিশনার ভূমি আসলাম সুলতানা নাসরিন, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফজাল হোসেন, ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহম্মেদ দুলাল প্রধান, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ, সাবেক কাউন্সিলর ইসরাত জাহান খান স্মৃতি, ইফাত জাহান মায়া সহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সহধমির্নী সহ সকল ওয়ার্ডের সদস্যরা সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা।