দেশের বরণ্যে অভিনেতা আফজাল হোসেন। নির্মাণ আর অভিনয়ের পাশাপাশি লেখালেখিও করেন তিনি।
প্রায় সময় তার লেখায় উঠে আসে নানা ইস্যু। আবার কখনও তিনি মনের কথাগুলো তুলে ধরেন ভক্ত-দর্শকদের কাছে।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি লেখলেন, বাঙালির স্বভাব ও আচরণ নিয়ে।
শনিবার (০৯ নভেম্বর) সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে আফজাল হোসেন লেখেন, আজ-কালকার মানুষেরা নিজেদের বিচারে নিজেরাই ঠিক করে নেয়, কারা ভালো আর মন্দ কারা। শুধুমাত্র নিজের, নিজ গোষ্ঠী ও নিজের স্বার্থের মানুষদের ভালো মনে করে, নিজেদের ভালোই মন দিয়ে চায়। যত দোষ নন্দ ঘোষের মত, অন্যদেরকে খুবই খারাপ ভাবে। ভাবে, তাদের দোষেই দেশ-সমাজ-মানুষ সবই যাচ্ছে রসাতলে।
তিনি লেখেন, অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে একটা জাতি চোখ থাকিতে অন্ধের মতো। তারা যেটা দেখতে চায় সেটা দেখে, যা দেখতে চায় না- দেখে না। তারা বুঝেও নিজ নিজ সুবিধামতো। খুশি হওয়া উচিত হবে না মনে করে খুশি হওয়ার মতো বিষয়েও মুখ বেজার করে থাকে। স্বার্থপর চিন্তা, চরিত্র কারো ভালো ডেকে আনে না।
আফজাল হোসেন আরও লেখেন, পিছন ফিরে তাকালে নিজেদের স্বভাবের মন্দ দিকটা স্পষ্ট দেখা যায়। দেশে বিশেষ হয়ে উঠবার একঘেয়ে ফর্মুলা হচ্ছে- আমি ভালো, তুমি খারাপ। দেশটা স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যারা যারাই শাসনক্ষমতায় এসেছে- টিকিয়ে রেখেছে ওই একটাই ভাব, বিশ্বাস, মন্ত্র- আমি ভালো তুমি খারাপ।
অন্যের প্রতি ঘৃণার করে মুক্তি মেলে না সেকথা উল্লেখ করে আফজাল হোসেন লেখেন, একটা জাতি একজীবনে দেখে যেতে পারল না, আদর্শ প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা নিয়ে কেউ মানুষের পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছে। কালে কালে দেখতে হয়েছে- আমার আপন আর অন্যের পর হও- তাতেই মানুষ তোমার মিলবে মুক্তি। পর হয়ে শত্রু বনে, অন্যদের প্রতি ঘৃণার পাহাড় তৈরি করে মুক্তি মেলে না। শত্রু শত্রু খেলতে খেলতে এখন কে, কাকে বন্ধু বলে ভাবতে পারে মানুষ? কে, কাকে বিশ্বাস করে? দিনভর যদি দেখতে হয় কারো প্রতি কারো শ্রদ্ধা নেই, ভক্তির প্রয়োজন নেই, পরস্পরকে অসম্মান অমর্যাদা করে আত্মসুখ মিলছে- এসবের কোনোটাই কোনো মানুষের অর্জন নয়।
সবশেষে এই অভিনেতা লেখেন, আমরা দেশের, দল বা গোষ্ঠীর গৌরবে গৌরবান্বিত বোধ করি কিন্তু মানুষ পরিচয়ের গৌরব কিসে, কিভাবে তা অর্জিত হতে পারে- তা নিয়ে ভাবি না। আমরা জিততে চাই গায়ের জোরে, প্রতিহিংসার তীব্রতা দিয়ে। জিতি। আনন্দ উল্লাস করি কিন্তু জানা হয় না মানুষ থাকছি না কেউ, রোজ হেরে হেরে ভূত হয়ে যাচ্ছি।