সোমবার (১৩ মার্চ) গণভবনে কাতার সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমার শক্তি আমার জনগণ, ওপরে আল্লাহ আছে। আর আমার বাবার আশীর্বাদের হাত আমার মাথায় আছে। কাজেই কে কী চাপ দিলো না দিলো এতে কিছু আমাদের আসে যায় না। জনগণের কল্যাণে যে কাজ করার সেটাই আমরা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এমন বহু চাপ তো ছিল। পদ্মাসেতুর আগে তো কম চাপ দেওয়া হয়নি। কোনো একটা দেশের সেই অ্যাম্বাসেডর থেকে শুরু করে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে টেলিফোনের ওপর টেলিফোন, হেন তেন। একটা ভদ্রলোক একটা ব্যাংকের এমডি তাকে এমডি পদে রাখতে হবে। তো এমডি পদে কি মধু তা তো আমি জানি না এবং আইনে আছে ৬০ বছর, হয়ে গেছে তার ৭০ বছর বয়স তারপরও এমডি পদে থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটাই হয় এমডি পদে থাকলে বোধহয় মানি লন্ডারিং করা যায়, পয়সা বানানো যায়, পয়সা মারা যায়, গরিবের রক্ত চুষে খাওয়া যায়। যাই হোক, সেই চাপও কিন্তু শেখ হাসিনা সহ্য করে চলে এসেছে। তারপর নিজের পয়সায় পদ্মাসেতু বানিয়ে তাদের দেখালাম এই চাপে আমাদের কিছু আসে যায় না।
কোকো রহমান মারা যাওয়ার পর খালেদা জিয়াকে সান্তনা দিতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেলো, আমি গেলাম তাকে দেখতে। একজন সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাতে। আমাকে কীভাবে অপমানটা করলো, আমার গাড়ি ওই বাড়ির মধ্যে ঢুকতে দেবে না। বড় গেট বন্ধ; টেলিফোন করে সময় নেওয়া হয়েঝে যে আমি এ সময় আসব, তারপরও সে গেট বন্ধ করলো। আমি তখন চলে গিয়েছি। তো আমি বললাম ঠিক আছে ছোট গেট দিয়ে ঢুকবো। আমার গাড়ি যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ছোট গেট বন্ধ করে দিলো। তো এত অপমানের পর তাদের সঙ্গে কীসের বৈঠক?
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাঝে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে, ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিরও চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, আমি বিশ্বাস করি, কেউ কিছু করতে পারবে না। সাময়িক কিছু একটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সেটা মোকাবিলা করবে আমাদের জনগণই।
দেশ-বিদেশের অনেক সংস্থা আগামী নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তো অনেকগুলো এজেন্সি উন্মুখ হয়ে আছে, আন্তর্জাতিক এবং দেশীয়। ৪০ জনের যে নাম এসেছে ওটার পেছনেও কিছু অ্যামবিশন (উচ্চাকাঙ্ক্ষা) আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। আশা করি রমজানে কোনো অসুবিধা হবে না।
খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে বাসায় থাকার সুযোগ করে দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ; খালেদা জিয়ার ভাই এসে, বোন এসে আমার কাছে, রেহানার কাছে এসে আকুতি করলো। এরপর তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকা, চিকিৎসার সুযোগটা করে দিয়েছি। এটুকু যে করেছি সেটাই যথেষ্ট।
তিনি বলেন, যারা বারবার আমাদের ওপর হত্যা করে, আমাদের অপমান করে, সারা বাংলাদেশে কাকে না অপমান করেছে। তারপরও এইটুকু সহানুভূতি পেয়েছে, সেটা শুধু আমার কারণে। নইলে এদের সঙ্গে কিসের বৈঠক, কিসের কি? তাছাড়া আর কি ক্ষমতা আছে তাদের, সন্ত্রাস করা ছাড়া আর তো কোনো ক্ষমতা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
স্বল্পোন্নত দেশসমূহের (এলডিসি ৫: সম্ভাবনা থেকে সমৃদ্ধি) ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলন উপলক্ষে গত ৪ থেকে ৮ মার্চ কাতার সফর করেন প্রধানমন্ত্রী।