সাভারের আশুলিয়ায় এক ব্যক্তিকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর দিনই এক আনসার সদস্যের গোপনাঙ্গে আঘাত করেন ওই এএসআই এবং জোরপূর্বক আপসনামায় ভুক্তভোগী আনসার সদস্যের স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা থানার সামনে একত্রিত হয়ে বিচারের দাবি জানান।
অভিযুক্ত হলেন- আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম।
গত বুধবার (১ জানুয়ারি) রাতে রনি নামের এক ব্যক্তির হাতে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এএসআই জহিরুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে আনসার সদস্যের গোপনাঙ্গে আঘাত করেন তিনি।
দুই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা হলেন- আশুলিয়া ইউনিয়নের মো. রনি মিয়া ও আনসার সদস্য নবীন মিয়া। জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার বনগ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে নবীন মিয়া।
ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ব্যাপারে ভুক্তভোগী রনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাড়ির দুই কলোনিতে শ্রমিক শ্রেণির লোকজন ভাড়া থাকেন। রাতে কয়েকজন ভাড়াটিয়া বসে তাস খেলছিলেন। গতকাল রাত ২টার দিকে আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম, একজন এসআই ও দুইজন কনস্টেবল নিয়ে আমার বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করেন। পরে তাস খেলার বিষয়ে নানা প্রশ্ন করে আমার হাতে ইয়াবা দিয়ে ছবি তোলেন তারা। পরে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। অনেক কষ্টে ২০ হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
ভুক্তভোগী আনসার সদস্য নবীন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আশুলিয়া থানার সামনে কথা-কাটাকাটির জেরে সহকারী উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম আমার গোপনাঙ্গে আঘাত করেন। পরে থানায় মামলা দায়ের করতে চাইলে আমাদের টাকা দিয়ে জোরপূর্বক আপসনামায় স্বাক্ষরের চেষ্টা করেন তিনি। স্থানীয়রা খবর পেয়ে থানার সামনে একত্রিত হয়ে জহিরুলের বিচার দাবি করেন। বিচারের আশ্বাস পেয়ে স্থানীয়রা চলে যায়।
নবীন মিয়ার ভাই শিপন মিয়া বলেন, ঘটনার পর ওসি (আবু বকর সিদ্দিক), অপারেশন ওসি (মো. আব্দুল বারিক) ও তদন্ত ওসি (কামাল হোসেন) বলেন, তিনি যখন অন্যায় করেই ফেলেছেন তো আমরা সামাজিকভাবে মীমাংসা করে দিচ্ছি। পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যে আমি ও আমার ভাই এবং স্বজনরা যারা ছিলেন সবাই রাজি হই। পরে পুলিশ বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
অভিযোগ রয়েছে আশুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদের সামনেই ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো ও আনসার সদস্যদের গোপনাঙ্গে আঘাত করেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জহিরুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এএসআই জহিরুল ইসলাম গাজীপুর সদর থানায় দায়িত্ব পালনকালে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। চাঁদাবাজি, নারীকে আটকে রেখে টাকা আদায়সহ নানা ধরনের কুকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গাজীপুর আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগে এএসআই জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আশুলিয়া থানায় যোগদানের পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনাটি অস্বীকার করলেও আনসার সদস্যের গোপনাঙ্গে আঘাতের ব্যাপারে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য এএসআই জহিরুল ইসলাম দোষ স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ভাই এটা হঠাৎ হয়ে গেছে, দুঃখিত।
তবে ক্যামেরা দেখেই রেগে আগুন তিনি। ক্যামেরার সামনে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পরপরই এএসআই জহিরুলকে ক্লোজ করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
তবে এসব ঘটনার সঙ্গে আশুলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি।