রোববার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে
জেলা প্রশাসক নিয়োগে বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে পদায়নের পর তুলে নেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসন দেখে এবং বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে। একজন মানুষকে যখন ডেস্কে কাজ করতে দেখেন তার এক ধরনের পারফরমেন্স থাকে। আবার মাঠের কাজের ধরন কিন্তু ভিন্ন রকম।
তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করেই ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। দু-একজন বিভিন্ন কারণে ফেল করেন, তাদের সংখ্যা কিন্তু কম। তারা কর্মস্থলে গিয়ে অ্যাডজাস্ট করতে পারছেন না। অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যা আমাদের অনেক সময় অ্যাম্বারাসও (বিব্রত) করে। সেসব ক্ষেত্রে আমরা তাদের তুলে নিয়েছি, যেন আরও ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশেন সৃষ্টি না হয়। আমরা চেয়েছি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের কর্মকর্তারা যেন চমৎকারভাবে কাজ করতে পারেন এবং একই সঙ্গে যেন আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো চালিয়ে নিতে পারেন।
ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, যাদের (যেসব ডিসি) তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের ২০ জন ছিল ২২তম ব্যাচের। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই তারা যুগ্ম-সচিব হয়ে যাবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কিছু অভিযোগ ছিল, সেগুলো দেখেছি। জনমনে কিছু অস্বস্তি আছে, সেজন্য আমরা কাউকে কাউকে তুলে নিয়েছি। এরমধ্যে এমন দু-একজনকে তুলেছি যারা ডেস্কের মত মাঠ পর্যায়ে পারফর্ম করতে পারছে না। নিয়মের বাইরে, আইনের বাইরে, বিধি-বিধানের বাইরে কিন্তু কোনো কিছু করিনি। ডিসি কিন্তু একদিনে হয় না। মাঠ প্রশাসনে তাদের দুই বছর কাজ করতে হয়।
তিনি বলেন, এখন আমরা রাইট ম্যানকে রাইট প্লেসে, অর্থাৎ যোগ্য লোকগুলোকে দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেন স্মুথলি সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে পারে প্রশাসন। সেটিই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রশাসনের ভাবমূর্তিও প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে, ভালো হচ্ছে। এ গতিধারা যেন ঠিক থাকে সেজন্য আমরা এসব কাজ করে থাকি।
ফরহাদ হোসেন বলেন, এখন যারা ডিসি হচ্ছেন তাদের নিয়োগ হয়তো অন্য সরকারের সময় হয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কতটুকু প্রশিক্ষিত করেছি সে অনুযায়ীই তাদের পদায়ন করি। সেজন্য এ কথা বলার কোনো স্কোপ নেই, কারণ রাতারাতি কেউ ডিসি হয় না। আমি চাইলেই পলিটিক্যাল কাউকে ডিসি করতে পারবো না।
তিনি বলেন, সরকারের পলিসি রয়েছে, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা উপহার দিতে চাই। এজন্য আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে সেটি ব্যক্ত করেছেন। আমরা কিন্তু সেদিকেই যাচ্ছি। সেটির জন্য কিন্তু সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া আছে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো অতিকথন চলবে না, যা কিনা প্রশাসনে ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য ডিসিদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ও সুন্দরভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে প্রফেশনালিজম বা পেশাদারত্ব শো করতে হবে। ডিসিদের যে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সে অনুযায়ী জনগণকে সেবা দিতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে সেটি জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের কর্মকাণ্ডগুলো কিন্তু কন্টিনিউ করতে হবে। ডিসিরা যেন কোনো ফাঁদে পা না দিয়ে সুন্দরভাবে কাজগুলো করতে পারে এবং তারা যেন যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দেয়। কেউ যেন কোনো ওভার রিঅ্যাক্টিং না হয়, সেটিও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডিসিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, সংযত থেকে ধৈর্য ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, এখন এই সময়ে কিন্তু আপনাদের কাজের চাপ অনেক বেশি। অনেক প্রজেক্ট আছে যেগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। সেজন্য সময়ের ব্যবহার, মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ এবং উন্নত সেবাদান নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার যেভাবে চাইবেন সেভাবেই হবে। আমাদের তরফ থেকে একটি নির্বাচন সুন্দর করার জন্য যতটুকু সহযোগিতা দরকার ততটুকু করছি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, বেছে বেছে সেরা অফিসারদের সেখানে দেওয়া হয়েছিল। ভালো কর্মকর্তাদের ডিসি করা হচ্ছে। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।