আদতে রেস্টুরেন্টের আড়ালে বার পরিচালনাসহ গড়ে তুলেছেন এক রঙিন সাম্রাজ্য।
এক সময়ের এ ওয়েটার এখন শতকোটি টাকার মালিক। যুক্তরাষ্ট্রে করেছেন বাড়ি-গাড়ি। স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন সেখানেই। রেস্টুরেন্টের আড়ালে তার পরিচালিত একটি বারে অভিযান পরিচালনার পর এমন তথ্যই জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি জানায়, এ বারে প্রতিদিন যাতায়াত ছিল সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। তাদের মধ্যে রয়েছে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের চাকরিজীবী, আইনজীবী, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষরা। অভিযান পরিচালনার সময়ও বিনা লাইসেন্সে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সেখানে বসে মদ্যপান করছিলেন।
কিংফিশার রেস্টুরেন্ট নামে কথিত বারটি পরিচালনা করে আসছিলেন মো. মুক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি একটি লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রায় ৫টি বার পরিচালনা করে আসছিলেন। অবৈধভাবে বিদেশি মদ ও বিয়ার এনে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছিলেন তিনি।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ১৩ নম্বর সেক্টরের গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ রোডের একটি বাড়িতে শত শত মানুষ গান বাজনার নামে ডিজে পার্টি করছে এবং সেখানে প্রচুর পরিমাণ মদ বিক্রি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আসে। এর আগেও উত্তরার সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন।
এ তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রাত ৯টার দিকে ডিবি উত্তরার সব টিম ওই বাড়িটিতে যায়। তারা সেখানে গিয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পান। সেখানে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মদ ও বিয়ার মজুদ রয়েছে।
পরে ডিবির সদস্যরা ৫০০ বোতল বিদেশি মদ ও প্রায় ৬ হাজার ক্যান বিয়ার জব্দ করে। এসব বিদেশি মদ ও তারা কীভাবে দেশে নিয়ে এসেছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্যই জানাতে পারেনি। কাগজপত্রের জন্য রাত ২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সেখান ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে মামলায় গ্রেফতারদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, কিংফিশার রেস্টুরেন্ট নামে এ ভবনে এসব কার্যক্রম চলতো। কথিত এ বারের মালিক মুক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তার আরও বেশ কয়েকটি বার রয়েছে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জে।
গ্রেফতার বারের ম্যানেজার আমাদের বলেছেন, মিরপুর, গুলশান ও নারায়ণগঞ্জসহ ৫টি বার চালান মুক্তার। সেগুলো একই লাইসেন্সের কিনা সেটা আমরা জানি না।
মুক্তার ২০০৮ সালের দিকে বারিধারায় এভিনিউ নামে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন। লেকভিউ নামে গুলশান-২ একটি রেস্টুরেন্টে ছিল সেখানেও তিনি কাজ করতেন ওয়েটার হিসেবে। ওয়েটার থেকে মুক্তার এখন শতকোটি টাকার মালিক। তার যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি-গাড়ি আছে। সেখানে তার স্ত্রী ও বাচ্চা বসবাস করে।
মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কাকে কাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিক ও ম্যানেজারসহ অনেককে মামলায় আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতার ৩৫ জনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কয়জন এ বিষয়গুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি।
এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো কোরিয়ান নাগরিক জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করছি।
উত্তরার কথিত এ বারটিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছিল। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, সেখানে কাদের যাতায়াত ছিল সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করবো।