আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি এটা (অর্থাৎ কোরআন) শবে কদরে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো শবেকদর কী? শবেকদর এক হাজার মাস অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। ’ (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)
নবী করিম (সা.) এ রাত পাওয়ার আশায় রমজানের শেষ দশ দিন নিয়মিত ইতিকাফ করতেন। কারণ এ রাত অনুসন্ধান করাও ইবাদত।
রমজান মাস মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অনেক বড় নিয়ামত। মহা মূল্যবান এই মাসের বড় একটি পাওয়া, হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’।
রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বিজোড় রাতে ইমানদাররা এ শ্রেষ্ঠ রজনীর খোঁজ করে।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
তাই প্রতিটি বিজোড় রাতকেই লাইলাতুল কদর ভেবে ইবাদতে মশগুল হয়ে যান ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
এসব রাতে কোন কোন আমল করলে, বান্দা সত্যিকার অর্থে লাইলাতুল কদরের বরকত, রহমত ও ফজিলত পেতে পারে তা জানা জরুরি।
কেউ যদি কদরের রাতে আমল করতে চান, এই নিয়মে করতে পারেন...
১) রাত দশটার পর থেকে টিভি বা মোবাইল ফোন দেখা থেকে বিরত থাকুন। ২) বেশি গরম লাগলে গোসল করুন ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করুন। ৩) রাত ১২ টার আগ পর্যন্ত পবিত্র কুরআন পড়ুন। ৪) বেশি বেশি নফল আর হাজতের নামাজ পড়ুন।
৫) রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত জিকির করুন।
জিকিরগুলো হবে - সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লহু আকবার। (১০০ বার করে), লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (২০০ বার), আস্তাগফিরুল্লাহ (কমপক্ষে ৫০০ বার, যত বেশি সম্ভব হয়), সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি (কমপক্ষে ১০০ বার), লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ'লা কুল্লি শাইয়্যিন কদির (কমপক্ষে ১০০ বার)।
যত পারেন দুআয় ইউনুস পড়ুন - লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায্ যলিমীন। আরও পড়ুন - সুবহানাল্লহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লহিল আযীম। (কমপক্ষে ১০০ বার)। লা হাওলা ওয়ালা কুওওতা ইল্লা বিল্লাহ বেশি বেশি পড়তে পারেন।
এসব দুআ পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দরুদ শরিফ ও সূরা ইখলাস যত বেশি পড়া যায়। স্যায়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করুন।
৬) রাত ২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত তাহাজ্জুদ পড়ুন ৮ রাকাত। রুকু ও সিজদায় বেশি সময় ব্যয় করুন। পারলে সিজদায় দোআ পড়ুন।
৭) তাহাজ্জুদের পর তিন রাকাআত বিতরের নামাজ পড়ুন। ৮) সাহরি খাওয়ার আগেই হাত তুলুন মালিকের কাছে। আপনার প্রয়োজনের সব কিছু খুলে বলুন। সারা রাতের এসব ইবাদত কবুলের আবেদন জানান। জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ চেয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করুন। মৃত আত্মীয়-স্বজনের গুনাহ মাফের জন্য দরখাস্ত করুন। বারে বারে বলুন -রব্বির হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি সগিরা।
একটু চোখের পানি ফেলে বলুন, মালিক, আমি আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছেই হাত পেতেছি.. খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না।
৯। মুনাজাত শেষে সাহরি খান। এরপর ফজরের নামাজ পড়ুন।
শবে কদরের এসব আমল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন, যারা আপনার কথা শুনে এ আমল করবে। আপনিও তাদের আমলের সমান সাওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ্।
কারণ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী আমলকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। কিন্তু আমলকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না। [মুসলিম ২৬৭৪]
এই রাতে প্রত্যেকটি আমল এমনভাবে করবেন, যেন আজকেই নিশ্চিত শবে কদর। এ বিষয়ে মনে এমন কোনো সন্দেহ না রেখেই ইবাদত করতে হবে। মনে রাখা জরুরি - ৫/১০ টাকা দান করলে হাজার মাস বা ৮৩ বছর ৪ মাস প্রতিদিন দান করার সওয়াব। দুই রাকাত বেশি নামাজ পড়া মানে টানা ৮৩ বছর ৪ মাস বেশি নামাজ পড়ার সওয়াব, এই রাতে বেহুদা কথা না বলার অর্থ টানা ৮৩ বছর ৪ মাস বেহুদা কথা থেকে জবানকে হেফাজত করার সওয়াব।