কুমিল্লার বরুড়া থানা পুলিশ কর্তৃক ক্লু-লেস পপি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন-
মাহবুব আলমঃ
গত ১৩/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বরুড়া থানার অভিযোগকারী মোঃ আলী হোসেন (৪৫) এর মেয়ে পপি আক্তার (১৭) বরুড়া থানাধীন সোনাইমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় হতে বাড়িতে এসে ছাগল চরাতে জমিতে যায়। কিন্তু বাদীর স্ত্রী বাড়িতে এসে বাদীর মেয়ে পপি আক্তার (১৭) কে না পেয়ে বাদীর স্ত্রী বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে বরুড়া থানাধীন ১৩নং অদ্রা ইউপির সোনাইমুড়ী সাকিনের চান মিয়ার জমি সংলগ্ন খালের পানি থেকে পপি আক্তার (১৭) কে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করার পর ১৫/১২/২৩খ্রিঃ তারিখে বাদী থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার কুমিল্লা মহোদয়ের সার্বিক দিকনির্দেশনায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার, জনাব এ, কে, এম এমরানুল হক মারুফ এর নেতৃত্বে বরুড়া থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে স্থানীয় সোর্স ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বরুড়া থানা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ফারুক হোসেন শামীম (২৭), পিতা- মিজানুর রহমান, মাতা- ফাতেমা বেগম, সাং- মহিষ পুকুরিয়া, সোনাইমুড়ি, থানা- বরুড়া, জেলা- কুমিল্লা কে সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) কে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী কাশেম হোসেন (৪৪), পিতা- মৃত মনু মিয়া, মাতা- জয়দুরের নেছা, সাং- মহিষ পুকুরিয়া, সোনাইমুড়ি, থানা- বরুড়া, জেলা- কুমিল্লা এর নাম উল্লেখ করে। গ্রেফতারকৃত আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) এর ভাষ্য মতে ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী কাশেম হোসেন (৪৪) কে উক্ত চৌকস টীম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেন এবং কাশেম হোসেন (৪৪) পুলিশ হেফাজতে হত্যাকান্ডে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় যে আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) বেলা অনুমান ১৪.১৫ ঘটিকার বরুড়া থানাধীন সোনাইমুড়ি গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে গাঁজা সেবনের উদ্দেশ্যে সোনাইমুড়ি সাকিনে চান মিয়ার জমি সংলগ্ন খালের পাড়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকে জমিতে ধান কাটারত অপর আসামী কাশেম হোসেন (৪৪) এর সাথে কথাবার্তা বলে। উক্ত জমির পাশ্ববর্তী জমিতে ভিকটিম পপি আক্তার (১৭)কে ছাগল চরাতে দেখতে পায় এবং আশেপাশে কোন লোকজন দেখতে না পেয়ে তাঁদের মনে কু-চিন্তার উদয় হয়। সে মোতাবেক আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) পপি আক্তার (১৭)কে কু-প্রস্তাব দিলে উক্ত প্রস্তাবে রাজি না হলে আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) ভিকটিমের হাত ধরে টানা হেঁচড়া করে। পরে ভিকটিমকে আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) ও অপর আসামী আবুল কাশেম (৪৪) এর সহায়তায় মাটিতে ফেলে ধর্ষনের চেষ্টা করলে পপি আক্তার (১৭) তাঁদের হাত থেকে ছুটে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পুনরায় আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) ভিকটিমকে ধরে মাটিতে শুয়ে ধর্ষনের চেষ্টা করলে ভিকটিম ধস্তাধস্তি করে এবং চিৎকার দিতে চেষ্টা করলে আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) কোন উপায় না দেখে ভিকটিমের গলা চেপে ধরে এবং হাতের কাছে একটি বাঁশের টুকরা দিয়ে ভিকটিমের কন্ঠনালীর উপর চেপে ধরে রাখে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামীদ্বয় লাশ গোপনের উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী খালের পানির নিচে কাঁদার মধ্যে চেপে রেখে আসামী ফারুক হোসেন শামীম (২৭) গাড়ি চালাতে চলে যায় এবং অপর আসামী কাশেম হোসেন (৪৪) তার কৃষি জমিতে ধান কাটতে চলে যায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় সহ ঘটনাস্থলে গেলে হত্যাকান্ডের সময় ব্যবহৃত বাঁশের টুকরাটি আসামীদের দেখানো মতে পাশের জঙ্গলের ভিতর থেকে উদ্ধার করেন। আসামীদেরকে বিধি মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে আসামীদ্বয় উক্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। এ সংক্রান্তে বরুড়া থানার মামলা নং-০৮, তাং-১৫/১২/২৩খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোডে মামলা রুজু করা হয়।