প্রিন্ট এর তারিখঃ মার্চ ৬, ২০২৫, ১২:৩২ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ মার্চ ৯, ২০২৩, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ
কোনো মেয়ের অল্প বয়সেই যেন স্বপ্ন থেমে না যায়, এজন্য বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন-রহিমা শ্রেষ্ঠ জয়িতা’
কোনো মেয়ের অল্প বয়সেই যেন স্বপ্ন থেমে না যায়, এজন্য বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন-রহিমা শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ পুরস্কারও পেয়েছেন।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। মা হয়েছিলেন অপ্রাপ্ত বয়সেই। এই অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে চাপা কী যে কষ্টের তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মানিকগঞ্জের রহিমা বেগম (৫২)। অসুস্থ স্বামী আর সন্তানের খাবার জোটাতে কঠিন জীবন সংগ্রামে নামতে হয় তাকে। তারপরও দমে যাননি, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এই নারী। তার মতো আর কোনো মেয়ের অল্প বয়সেই যেন স্বপ্ন থেমে না যায়, এজন্য বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এ পর্যন্ত ত্রিশটিরও বেশি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন রহিমা। নানা প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে অন্য নারীদের শক্তি আর সাহস যোগাচ্ছেন তিনি। স্বীকৃতি স্বরূপ এবছর জেলার ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ পুরস্কারও পেয়েছেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের পশ্চিম বেতিলা গ্রামের আহম্মদ খানের স্ত্রী রহিমা বেগম। বর্তমানে তিনি বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের নির্বাচিত নারী সদস্য। রহিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে লেখাপড়া থেমে যায় ষষ্ঠ শ্রেণিতেই। এরপর স্বামীর সংসারে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে তাল মিলেয়ে চলতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। মা হন ১৫ বছর বয়সেই। এর মধ্যে হঠাৎ তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন স্বামী আর সন্তানদের খাবার জোটাতে কঠিন জীবন সংগ্রামে নামতে হয় রহিমাকে। হাঁস মুরগি, গরু-ছাগল পালনসহ কৃষি জমিতেও কাজ করেছেন তিনি। চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। তবে কখনো থেমে যাননি। বুকে সাহস নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এক সময় মানুষ তাকে অনেক অবহেলা আর অবজ্ঞার চোখে দেখলেও এখন সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। তাই জনগণের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন ইউপি সদস্য। বাল্যবিয়ে বন্ধের বিষয়ে রহিমা বেগম বলেন, নিজে বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে বুঝতে পেরেছি জীবন কত কঠিন। এজন্য মনে মনে শপথ নিয়েছিলাম বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো। প্রথমে একাই এই কাজ করতাম। বর্তমানে ৬০ জনের একটি গ্রুপ করেছি। কোথাও বাল্যবিয়ের খবর পেলেই ছুটে যাই। সামাজিকভাবে ও প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে অন্তত ত্রিশটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত উঠান বৈঠক করেন তিনি।বাল্যবিয়ের পাশাপাশি নারী নির্যাতন, যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধেও কাজ করছেন রহিমা। কলেজ পড়ুয়া সানজিদা, সুমাইয়া এবং গৃহবধূ সাহেরা ও নাসরিন জানান, রহিমা বেগম সব সময় মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ান। বাল্যবিয়ে, যৌতুক ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলেন। নারীদের সাহস দেন। তার কারণে অনেক নারী আজ শক্তি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি। মানিকগঞ্জ জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, রহিমা বেগম সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছেন। এলাকার বাল্যবিয়ে, যৌতুক, নারী নির্যাতন ও মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি নিজেও বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিলেন। অসচ্ছল পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে কঠিন সংগ্রাম করেছেন। আজ তিনি একজন সফল নারী। সমাজে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা তিনি। তার এই কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এবছর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে তাকে জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত করা হয়।
Copyright © 2025 নগর সংবাদ. All rights reserved.