নিজের বিয়ের পাত্রী দেখতে। পাত্রী আবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাকে দেখেই পছন্দ হয়ে যায় নাছির উদ্দিন সেলিমের। ওই মেয়ের পরিবারকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এরপরই তার সঙ্গে গড়ে তোলেন ‘প্রেমের সম্পর্ক’। এ সুযোগে তাকে ‘শারীরিক সম্পর্কে’র প্রস্তাব দেন তিনি। এক সময় ‘ধর্ষণচেষ্টাও’ করেন।
এসব অভিযোগে নাসির উদ্দিন সেলিমের নামে মামলা করেন ওই মেয়ে। ১৪ এপ্রিল শ্রীপুর থানায় মামলা করা হয়। অভিযুক্ত নাসির গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়িবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
এদিকে মামলার তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে পুলিশ উল্লেখ করে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, পাত্রী দেখে আসার বেশ কিছুদিন পর বিয়ের কথা বলে নাসির উদ্দিন সেলিম শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন কিশোরীকে। কিন্তু কিশোরী তার প্রস্তাবে না করে দেন। এরই মাঝে বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করতে অভিযুক্ত শিক্ষক কিশোরীর বাড়ি যান। সেখানে আলোচনার ফাঁকে তাকে একা ঘরে ডেকে নেন। উভয়ের কথাবার্তার মধ্যেই ঘরের দরজা বন্ধ করে ধর্ষণের চেষ্টা চালান শিক্ষক। পরে কিশোরীর চিৎকারে তার স্বজনরা এসে তাকে উদ্ধার করে। এসময় পালিয়ে যান অভিযুক্ত নাসির।
কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনায় মেয়েটি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। ভেঙে গেছে তার বিয়েও।
কিশোরীর বাবার ভাষ্য, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ আশা করিনি। তার জন্যই এখন মেয়ের জীবন অনিশ্চিত। তারা সামাজিকভাবে হেয় হয়েছেন এ শিক্ষকের কারণে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছেন। অভিযোগ করেছেন
বিভিন্ন দপ্তরে। উল্টো বিচার তো পাননি, প্রতিনিয়ত তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ওই শিক্ষক।
জানা গেছে, ওই শিক্ষক গাজীপুরে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। তবে তার ভাই লুৎফর রহমান বলেন, এ ঘটনার পর থেকেই ভাইয়ের কোনো খোঁজ নেই। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, তাই সেখানেই ফয়সালার অপেক্ষায় আছি।
কাপাসিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সানজিদা আমিন বলেন, নাসির উদ্দিন সেলিম গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি চাকরিতে যোগ দেন। পরে তাকে পদায়ন করা হয় বড়িবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তাকে প্রশিক্ষণের জন্য গাজীপুর পিটিআইয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এরপর থেকে তার খোঁজ নেই। এছাড়া তার চাকরির সময় দুই বছর অতিবাহিত না হওয়ায় এখনো স্থায়ী হয়নি।
এই শিক্ষা কর্মকর্তা আরও জানান, এর মধ্যে তার নিকট শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এসেছে, যার তদন্ত করছেন তিনি। যা এখনো শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গাজীপুরের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা সংক্রান্ত বা এমন ধরনের ঘটনা সম্পর্কে তার কিছু জানা নেই।
পলাতক অবস্থায় কীভাবে একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে অংশ নিলেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর করোনা সংক্রমণের কারণে সব প্রশিক্ষণার্থীই বাড়ি বসে অনলাইনে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে এ শিক্ষকও রয়েছেন। তবে মামলা সংক্রান্ত তথ্য পেলে তিনি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার একটি মামলার কথা শুনেছি। এর সপক্ষে কোনো ডকুমেন্ট নেই। শিক্ষকও নিজে মামলার কথা আমাদের জানাননি। খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ মামলার তদারকি কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক। তাকে গ্রেফতারে একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও গ্রেফতারে করা যায়নি। পরে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। তদন্তের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে মামলার বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকেও চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে।