নগর সংবাদ।। রাস্তায় প্রকাশ্যে বাবাকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন আমেরিকা প্রবাসী ছেলে। বাবার অঢেল সম্পত্তির লোভ ও চতুর্থ বিয়েতে দ্বিমত পোষণ করায় জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথেই বাবার ওপর হামলা করেন ওই বখাটে ছেলে।
আহত সাবেক বন কর্মকর্তা মতলুবুর রহমান চৌধুরী সিলেট নগরের পশ্চিম পীর মহল্লার ১৪/৪০ বাড়ির বাসিন্দা। তার গ্রামের বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের দক্ষিণ দুবাগে।
পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। আর অভিযুক্ত ছেলে আলমগীর চৌধুরী বাবুকে আটক করে কোতোয়ালি থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
আহত মতলুবুর রহমান বলেন, তিনি ছেলে আলমগীর চৌধুরী বাবুর কাছে এতদিন জিম্মি ছিলেন। আজ জুম্মার নামাজ পড়তে ছেলের ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে (ঢাকা মেট্টো-গ-১৯-৪৩৫২) হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ মাজার মসজিদে যান। নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ছেলে আলমগীর ঘটনাস্থলে তাকে গাড়িতে আটকিয়ে পরনের ফতুয়ার কলার চেপে গাড়ির ভেতরে মারধর করেন। এ ঘটনায় মাথা ও চোখের কোনা ফেটে তিনি রক্তাক্ত হন। নিজেকে বাঁচাতে তিনি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও পারছিলেন না। পরে আশপাশের লোকজন ও মসজিদের মুসল্লিরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
নিজে নিরাপত্তাহীন দাবি করে ছেলের হাত থেকে উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে মতলুবুর রহমান বলেন, আমেরিকা প্রবাসী বখে যাওয়া তার ছেলে এ যাবত ৩ বিয়ে করেছে। আবারও সে বিয়ে করতে এসেছে। তাতে তিনি বাধা দেন। এ ছাড়াও তার সম্পত্তির লোভেও ছেলে এই নগ্ন হামলা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃদ্ধ মতলুবুর রহমানকে তার ছেলে কলার চেপে গাড়ির ভেতর মারধর করছিল। ঘটনাটি দেখতে পেরে রাস্তার অপর পাশে অবস্থিত কিউসেট মসজিদের মুসল্লি ও পথচারিরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
এ সময় তারা বৃদ্ধকে মারধরের প্রতিবাদ করলে হামলাকারী আলমগীর নিজেকে আমেরিকা পুলিশ সদস্য পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখান। বলেন, ‘আমার কাজে হস্তক্ষেপ করলে আমেরিকা পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে’।
স্থানীয়রা বাবাকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে আলমগীর চৌধুরী বলেন, তার বাবা দুই বিয়ে করেছেন। তিনি ছেলে হিসেবে তাকে শাসন করছিলেন। এটা নিজেদের ফ্যামিলি ম্যাটার, কাউকে নাক না গলাতে নিষেধ করেন তিনি।
পক্ষান্তরে তার বাবা উপস্থিত লোকজনকে বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মকর্তা (ফরেস্টার) ছিলাম। আমাকে আপনারা তার হাত থেকে রক্তা করুন। সে আমাকে জিম্মি করে রেখেছিল। আমাকে মেরে ফেলতে চায়। তখন উপস্থিত লোকজন ঘটনাটি পুলিশকে জানায়।
খবর পেয়ে কোতোয়ালি পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৃদ্ধ মতলুবুর রহমানকে চিকিৎসার জন্য তার ভাতিজা নাঈম চৌধুরীর সঙ্গে হাসপাতালে পৌছে দেয়। আর আলমগীরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী মাহমুদ বলেন, জন্মদাতা বাবাকে মেরে ছেলে রক্তাক্ত করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ঘটনায় ছেলের বাবা বাদী হয়ে মামলা দিলে পরবর্তীতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আলমগীর চৌধুরী এ যাবত ৩ বিয়ে করেছেন। দেশে মেয়েদের বিয়ে করে প্রবাসে গিয়ে তালাক দিয়ে দেন। তার ছোট ভাই শিপু চৌধুরীও প্রবাস ফেরত। তিনিও এরই মধ্যে দুই বিয়ে করেছেন। আগের স্ত্রী মারা যাওয়ায় বৃদ্ধ মতলুবুর রহমানও আরেকটি বিয়ে করেছেন।
তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারের দক্ষিণ দুবাগ গ্রামের লোকজন বলেন, বিয়ে করে সম্ভ্রমহানি ঘটিয়ে তালাক দেওয়া তাদের নেশায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি আলমগীর ও তার ভাই দেশে ফিরে আবারও বিয়ে করতে চান। এ অবস্থায় আমেরিকান পাসপোর্ট দেখিয়ে পাত্রীর সন্ধানে রয়েছেন তারা।