খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চাল আমদানিতে ট্যাক্স সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ধানের দাম অনেক কমে যাওয়ার এই ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল। কৃষকদের বাঁচাতে এই ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল। তখন ধান রফতানির মতো অবস্থাও ছিল না। ফলে কৃষকরা কম মূল্য পেত। তারা ধান উৎপাদন না করে জমি কেটে চিংড়িঘের, পুকুর, ফল ও সবজির বাগান করছিল। তখন যাতে চাল আমদানি না হয় সেজন্য এই ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছিল।’
অ-ব্যবসায়ীরাও এবার অনেক ধান-চাল মজুত করছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ফড়িয়ারাও তো রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন মজুতের তদারকি করছে।’
বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করতে আগ্রহীরা ২৫ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন জানিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমি আশা করি আমদানির চাল কিছুটা এসে ঢুকলেও তখন এর প্রভাব পড়বে, দাম কমবে। যারা ধান বা চাল মজুত করে রেখেছে তারা সেগুলো বাজারে ছেড়ে দেবে।’
আমদানির চাল কবে নাগাদ বাজারে আসতে পারে- এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধরেন এলসি খুলে আসতে আসতে দু-তিন সপ্তাহ তো লাগেই। চালের দাম এখনই কমে যাওয়ার কথা। চাল আমদানি শুল্ক কমানোর এসআরও জারির পরই নওগাঁতে প্রতি বস্তায় চালের দাম ১০০ টাকা করে কমে গেছে। ধানের বাজার ৭০ টাকা কমে গেছে। এখানে কমবে না কেন?’
কী পরিমাণ চাল আমদানি করবেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা পলিসিগতভাবেই বলব না। ব্যবসায়ীরা বেশি চালাক, যদি বলি অল্প আনব, তাহলে তারা আবার স্টক করবে। চালের বাজার কন্ট্রোল না হওয়া পর্যন্ত আমরা চাল আনতেই থাকব।’
মিলারদের কারসাজির কথা শোনা যায়- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘২০ হাজার মিল মিলে সিন্ডিকেট করা সম্ভব কি? তবে হ্যাঁ, এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, তাদের অধিক অর্থ আছে, তারা মিলে মজুতের চেষ্টা করে, মিলে হয়তো মজুত না করে গোপন কোনো জায়গায় মজুত করে কিনা সেটি আমরা মনিটরিং করার চেষ্টা করছি, গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে বাজার থেকে চাল তুলে নিয়ে প্যাকেটজাত করছে। এতে সরু চালের ওপর প্রভাব পড়ছে।’
‘আর মোটা চালের ওপর যে প্রভাবে পড়ছে তা হলো, নন-হিউম্যান কনজামশনটা হিসাব করি না। মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্মে চাল ব্যবহার করা হয়, আমরা এগুলো হিসাবেই আনি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবাই মিলে একটা পরিসংখ্যা করা উচিত- মোট কত চাল গ্রহণ করা হয়, কত লোক আছে, প্রতিদিন কত লাগবে? সেই অনুপাতে আমাদের উৎপাদন করতে হবে। এই হিসাব যতক্ষণ পর্যন্ত না থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হাতড়ে বেড়াতে হবে।’
আড়তদাররা কারসাজি করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় মিলের রেটের সাথে ঢাকার পাইকারি রেটের কোনো মিল আমি দেখি না। তারা তো তাদের চালান দেখায় না, বলে চালান এখনো আসেনি। ব্যাংকের সুদের হার কমিয়ে দেয়ার ফলে আমি মনে করি অনেকেই অনেক অর্থ ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায় মজুতের সুযোগটা পাচ্ছে।’
এত পদক্ষেপের পর কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না- জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানবতার দিকে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি মনে করি প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা লাভ করতে হবে, এটা আপনি ঠেকাবেন কীভাবে?’
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট করা হচ্ছে। কেউ যদি মজুত রাখে স্পেশাল পাওয়ারে মামলার জন্য নির্দেশ দেয়া আছে। আমাদের কাছে তো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার সেই করবে তো প্রশাসন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষক অধিদফতরও মামলা করতে পারবে।’
নিয়ম না মানা মিল মালিকদের মিলিং লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার।