চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার মিরকুটিয়া (বাঘুটিয়া) ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরত ফার্মাসিস্ট সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি ডিউটি বাদ দিয়ে মানিকগঞ্জের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়মিত চক্ষু চিকিৎসা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। চক্ষু চিকিৎসার মতো বিশেষায়িত কাজ একজন ফার্মাসিস্টের করার কোনো বৈধতা না থাকলেও সুমন তা নিয়মিত করে যাচ্ছেন, যা রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। জানা গেছে, ফার্মাসিস্ট সুমন মিয়া সপ্তাহের কয়েকদিন তার সরকারি কর্মস্থল মিরকুটিয়া (বাঘুটিয়া) ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডিউটি করেন এবং কয়েকদিন মানিকগঞ্জের বিভিন্ন বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখেন। শুধু তাই নয়, তিনি ফার্মাসিস্ট হয়েও চক্ষু চিকিৎসার মতো সংবেদনশীল কাজ করছেন, যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্থানীয়রা জানান, সুমন মিয়ার কাজ হলো ঔষধ বিতরণ করা কিন্তু ঔষধ বিতরণের সাথে সাথে অর্থের বিনিময়ে চক্ষু রোগীদের চিকিৎসা দেন। এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জে তার বেসরকারি চেম্বারে যাওয়ার কথা বলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই কাজ করে আসছেন। সরকারি হাসপাতালে তার অনিয়মিত উপস্থিতি এবং বেসরকারি চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখার বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেদিন তিনি বেসরকারি চেম্বারে রোগী দেখেন তার আগের দিন তার সরকারি কর্মস্থলে ছুটির আবেদন দিয়ে যান এবং পরের দিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গত (২৬ ফেব্রুয়ারী) বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) বৃহস্পতিবার ছুটির জন্য আবেদন জমা দিয়ে যান এবং পরবর্তীতে এসে ২৭ ফেব্রুয়ারী হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।
আরও জানা যায় সুমন মিয়া প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ সোমবার মানিকগঞ্জের “ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ফ্যাকো অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার”-এ সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী চিকিৎসাসেবা দেন। এছাড়াও, তিনি মানিকগঞ্জের অন্যান্য চক্ষু হাসপাতালেও রোগী দেখেন। গত সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে সুমন মিয়াকে মানিকগঞ্জের জয়রা রোডে অবস্থিত “ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ফ্যাকো অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার”-এ ১০৩ নম্বর কক্ষে রোগী দেখার সময় পাওয়া যায়। তিনি চিকিৎসকের চেয়ারে বসে রোগীদের চোখ পরীক্ষা করছিলেন। কখনো টর্চ লাইটের আলো ফেলে, কখনো নার্স দিয়ে ড্রপ দিচ্ছেন, আবার কখনো ট্রায়াল ফ্রেম লাগিয়ে ভিশন বক্সের মাধ্যমে পাওয়ার পরিমাপ করছিলেন। সুমনের কাছে চিকিৎসা নেওয়া মোছা. রঙমালা নামে এক নারী জানান, তিনি জানেন না সুমন ডাক্তার কি না, তবে চোখের ব্যথা নিয়ে তিনি তার কাছে এসেছেন এবং সুমন তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। আসিফ (৪৩) নামে আরেকজন রোগী জানান, তিনি সুমনকে ডাক্তার হিসেবেই চিনতেন এবং তার কাছেই চোখ দেখিয়েছেন।
এ বিষয়ে “ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ফ্যাকো অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার”-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রুবেল মিয়া জানান, তারা সব জেনেশুনেই সুমনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরকুটিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট মো. সুমন মিয়া বলেন, “আমি চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও অফিস ম্যানেজ করেই মাসে দুই দিন মানিকগঞ্জের এই হাসপাতালে সেবা দেই।” তবে চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, “সরকারি ছুটি ব্যতীত সুমনকে প্রতিদিন অফিস করতে হবে। ফার্মাসিস্ট হয়ে রোগী দেখার কোনো সুযোগ নেই। সুমনের এই কাজ সম্পর্কে আমি অবগত নই।” সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল আমীন জানান, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ফার্মাসিস্ট সুমনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”