শুক্রবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি এই লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থায়নের আহ্বান জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজউইকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে ওই নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। ‘লেটস পুট ব্যাক পিপল অ্যাট দ্য হার্ট অব ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর)। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজে বের করতে বিশ্ব নেতারা এখন দুবাইতে কপ২৮ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। নিবন্ধে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক বিপর্যয়, যা গরীবদের ওপর ধনীরা চাপিয়ে দেয় এবং ক্রমবর্ধমান হারে এটি তাদের নিজেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দুবাইতে কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনের জন্য আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতাদের বুঝতে হবে যে তাদের টপ-ডাউন (উপর থেকে নিচে) পদ্ধতি কখনোই কাজ করতে পারে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লড়াইয়ের জন্য আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদের দায়িত্ব দিতে হবে, এই লড়াইয়ে তাদের অর্থায়ন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেতাদের মতদ্বৈততায় জলবায়ু বিপর্যয় থেমে থাকবে না। এর ফলে এরই মধ্যে জনপদের ওপর টাইফুন এবং বন্যা হচ্ছে। খরার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে। জলবায়ু তহবিলের একটি ক্ষুদ্র অংশই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করা লোকেদের কাছে পৌঁছায়। তাদের নিজেদের এবং জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্থান ছাড়া তারা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জলবায়ু অনাচার ও বৈষম্য আরও বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথম সারিতে থাকা মানুষদের রক্ষায় সহায়তা না করলে বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু কার্যক্রমের কোনো মানে হয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা ও প্যাট্রিক ভারকুইজেন বলেন, আমাদের স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় সব তহবিল দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে হস্তান্তর করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য নতুন চিন্তাভাবনা এবং একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন প্রয়োজন। কপ২৮ সম্মেলেনে বিশ্বকে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য করা তহবিল অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে হবে। যাতে আমরা অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং জলবায়ু প্রভাবগুলোর সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে খাপ খাইয়ে নিতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে দ্রুত এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মুভিং ফ্রম গ্লোবাল টু লোকাল গ্লাসগোতে কপ২৬-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অভিযোজন অর্থের প্রবাহ দ্বিগুণ করে ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থ প্রদানকারীদের অবশ্যই ২০২২ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক অভিযোজন প্রবাহ গড়ে কমপক্ষে ১৬ শতাংশ বাড়াতে হবে। তবুও অভিযোজন অর্থায়ন প্রবাহ বিকাশে দেশগুলো ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন হয়েছে। এই অর্থ খুবই সামান্য। তবুও এই অর্থের ৬ শতাংশেরও কম, সম্ভবত ২ শতাংশের কম স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পগুলোতে পৌঁছায়। সঠিকভাবে ট্র্যাকিং এবং অর্থ প্রবাহের প্রতিবেদন না করার কারণে অনুমান পরিবর্তিত হয় এবং এটির উন্নতি করা দরকার। কোন শহর, রাস্তা, মাঠ এবং বাড়ি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তা তারাই জানেন সেখানে যারা বসবাস করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাদের একত্রিত হতে এবং তাদের নিজস্ব প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে উৎসাহিত এবং ক্ষমতায়িত করতে হবে। এটি বলা সহজ, করা কঠিন। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পগুলো পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রায়শই সময় এবং দক্ষতার অভাব হয়। প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করার জন্য তাদের সাহায্য এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। তহবিল সুবিধা নেওয়ার জন্য তাদের মৌলিক জিনিসগুলোর প্রয়োজন। যেমন- আইনিভাবে গঠিত সংস্থা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সবসময়ই স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন জলবায়ু অভিযোজনে একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু সহায়তা পৌঁছানোর বিভিন্ন উপায় অন্বেষণ করছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অভিযোজনের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা সহজ করে তোলে, অভিযোজনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল রয়েছে। ঢাকায় গ্লোবাল হাব অন লোকালি লিড অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে সরকার সমাধান জোরদারে এবং বিশ্বের অন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করতে সহায়তা করছে। এই প্রচেষ্টা এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে নাটকীয় সাফল্য অর্জন করেছে, উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। চ্যালেঞ্জ থেকে সম্ভাবনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় মেয়র এবং স্থানীয়রা তাদের জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ চিহ্নিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। অন্য বড় শহরগুলোর মতো মোংলা জলবায়ু অভিবাসীদের একটি বড় আগমন দেখেছে, যারা ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছেন। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে শহর এলাকার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহস্থল দূষিত হচ্ছে। মোংলা জনবসতির মানচিত্র তৈরি করছে, জলবায়ুর প্রধান দুর্বলতা চিহ্নিত করছে এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের উন্নয়ন করছে। ব্র্যাক একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং এটি যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সরকারের সহায়তায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের মাধ্যমে কাজ করছে।