ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরনের যন্ত্রপাতি থাকার পরেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ সার্জনের অভাবে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ পড়ে আছে অপারেশন থিয়েটার। ফলে উপজেলাবাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে নলছিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটার সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি কক্ষে তালা ঝুলছে। আর মূল কক্ষে কোভিড-১৯ এর টিকা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে জরুরি প্রসূতি সেবাসহ (ইএমওসি) সব ধরণের অপারেশন (অস্ত্রপচার) কার্যক্রম বন্ধ আছে। এতে উপজেলার সাধারণ জনগনের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আর মৃত্যুঝুঁকিসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার প্রসূতি মায়েরা। তাদের চিকিৎসা করাতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে নিতে হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে।
জানা গেছে, জরুরি প্রসূতি সেবা কেন্দ্রটি চালু থাকলে সেখানে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বিনা খরচে ও নিরাপদে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতেন। মাসে ২০ থেকে ২৫টি সিজারিয়ান অপারেশন অনায়াশেই চালানো যেতো। অসহায়, গরীব রুগীদের বিনা খরচে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর একমাত্র ভরসা ছিল এটি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান ও অ্যানেস্থেসিয়া (অচেতন) চিকিৎসক ২০০৯ সালের জুলাই মাসে বদলি হয়ে যান। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন ও অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক এখানে পোস্টিং দেওয়া হয়নি। এ কারণে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ আছে নলছিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সব ধরণের অপারেশন। এ অবস্থায় সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন এমন প্রসূতিদের নিতে হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আবার ক্লিনিকগুলোতে করাতে হলে তাদের সার্জনের অপারেশন চার্জ, ওষুধ ও ভাড়াসহ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গুনতে হয়।
এমন পরিস্থিতিতেও অসচ্ছল পরিবারের প্রসূতিরা ভাগ্যের ওপর ভরসা করে হাসপাতালটিতে ঝুঁকি নিয়ে ভর্তি হন। সেখানে ডাক্তার ও নার্সরা নরমাল ডেলিভারি করাতে ব্যর্থ হলে নিরুপায় হয়ে তাদের নিতে হয় বরিশাল। এমন ঝুঁকি নিতে গিয়েই গত মাসে উপজেলার নান্দিকাঠি গ্রামের সোহেল হাওলাদার তার নবজাতক ছেলেকে হারিয়েছেন। এটি করতে গিয়ে প্রসূতি মায়েরা পথে প্রাণ হারিয়েছেন এমন নজিরও আছে। তাই হাসপাতালটিতে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ সার্জন (গাইনি অপারেশন) পোষ্টিং দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ নিয়ে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন বরাবর তারা কয়েকবার স্বারকলিপিও দিয়েছিলেন।
এ ব্যপারে স্থানীয় বাসিন্দা জসিম হাওলাদার জানান, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রমসহ জরুরি প্রসূতি সেবা ফের চালু হওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সেবা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর শুধু টাকার অপচয় না, প্রসূতি মায়েরা জীবন হারানোর পাশাপাশি নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শিউলি পারভীন জানান, বিশেষজ্ঞ সার্জন ছাড়া অন্য কেউ ওই সেবা দিতে পারবেন না। সিজারিয়ান অপারেশন না করতে পারায় এলাকার প্রসূতিরা নানা দুভোর্গের শিকার হন। জেনারেল সার্জন, গাইনি সার্জন, অর্থপেডিক্স সার্জনসহ কোনো বিশেষজ্ঞ সার্জন না থাকার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম।
ঝালকাঠি জেলা সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম জানান, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতকে অনেক গুরুত্ব দেন। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যার বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। এটি দ্রুতই সমাধানের চেষ্টা করা হবে।