টিকটকে সেলিব্রেটি বানানো ও বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টুম্পা (১৭) নামে এক তরুণীকে ভারতে পাচারের পর হত্যার অভিযোগে প্রধান অভিযুক্তসহ তিন পাচারকারীকে আটক করেছে র্যাব-৬ এর সদস্যরা।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে যশোর ও খুলনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাসিন্দা আলী হোসেন (২০), খুলনা সদর থানার বাসিন্দা কুলসুম বেগম (৪৫) ও তার ছেলে আল-আমিন (১৯)। হত্যাকাণ্ডের শিকার তরুণী টুম্পা ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কমান্ডার লে. এম নাজিউর রহমান জানান, বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর থেকেই র্যাব আসামিদের আটকের লক্ষ্যে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে এবং অভিযান অব্যাহত রাখে। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত করে। এরপর শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী আলী হোসেন এবং পাচারকারী কুলসুম বেগম ও তার ছেলে আল-আমিনকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা টুম্পাকে পাচার ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। টুম্পা হত্যার ঘটনায় ঢাকার ডেমরা থানায় মামলা হওয়ায় আসামিদের ডেমরা থানায় হস্তান্তর করা হচ্ছে।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আরও জানান, আটক কুলসুম বেগমের মেয়ে বৃষ্টি এবং জামাই যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাসিন্দা নবাব ভারতে বসবাস করেন। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের পাচার করে নিয়ে যায়। এই কাজে বৃষ্টি ও নবাবের সহযোগী কুলসুম বেগম ও তার ছেলে আল আমিন। এই চক্রের সদস্যরা পরিচয়ের সূত্র ধরে ঢাকার ডেমরা এলাকার বাসিন্দা টুম্পাকে টিকটকে সেলিব্রেটি বানানো ও বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখায়।
তিনি আরও জানান, প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ২০২১ সালে টুম্পাকে খুলনায় কুলসুম বেগমের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। টুম্পাকে ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে ভারতের এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করানো হতো। এরপর বৃষ্টি ও নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য টুম্পাকে দুই মাস আটকে রাখা হয় এবং আলী হোসেন জোর করে টিকটক ভিডিও বানাতো। পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
র্যাব কমান্ডার জানান, পরবর্তীতে টুম্পা পাচারকারীদের অনেক গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে নবাব ও বৃষ্টির নির্দেশে গত ২৬ জানুয়ারি আলী হোসেন টুম্পাকে হত্যা করে। এরপর ভারতে টুম্পার মরদেহ উদ্ধার হলে গুজরাট পুলিশ ফোন করে টুম্পার বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অপর একটি ফোন নাম্বার থেকে ভিকটিমের বাবাকে জানানো হয় যে, আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে ভিকটিমের বাবা র্যাব বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন।