নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মাহমুদুল হক বলেছেন, যারা সরকারি চাকরি করেন না তাদের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ ছিল যে, সরকারি চাকুরেরা পেনশন পাচ্ছেন, আমরা কেন পাই না। তাদের জন্যই সরকার পেনশন স্কিমের মতো অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
আপনি যে বেসরকারি চাকরি করেন, ব্যবসা করেন, বিদেশে থাকেন, আপনিও সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বেতন বা আয়ের একটা অংশ জমা রাখতে পারেন। যারা ভিক্ষা করেন, যারা শ্রমিক, যারা দারিদ্র সীমার নিচে বাস করেন, তারা প্রত্যেকে আসতে পারবেন এর আওতায়। কেউ পাঁচ বছর বা ১০ বছরের টাকা একবারে দিয়ে দিতে চান, তাদের জন্য সেই সুযোগও রাখা হয়েছে। আমরা ২০৪১ সালে ভিক্ষুকমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই।
শনিবার (২০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আয়োজনে শহরের চাষাঢ়ায় সিনামন রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত অবহিতকরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মাহমুদুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জে দুই লাখ লোক টিসিবি কার্ডের আওতায় আছেন। সারা দেশে ১২৩ ধরনের সামাজিক সহায়তা দেওয়া হয় জনসাধারণের মাঝে। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলেন, আজকে আপনারাই সাক্ষী যে সরকারি অনেক সেবা আপনারা ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তব৷ বয়স্ক ভাতা প্রথমে চালু হয়েছিলো ১শ টাকা করে, তিন মাস পরপর তিনশ টাকা করে দেওয়া হতো, এটি নিয়ে হাসাহাসিও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া জানতেন যে একদিন এটি অনেক বড় তহবিলে পরিণত হবে। সত্যিই এখন দেড় লাখ কোটি টাকা দেওয়া হয় সারা দেশে বয়স্ক ভাতা হিসাবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, আমার অনেক আত্মীয় ৩০-৪০ বছর বিদেশে কাজ করে দেশে ফিরে নিঃস্ব অবস্থায় আছেন। তাদের জন্যও এটি দারুণ এক সুযোগ। পেনশন স্কিম পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না। হয়তো কিছু কিছু থাকবে, কিন্তু জনসাধারণের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় বৃদ্ধাশ্রম কমবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। আমাদের সবারই কোনো না কোনো আত্মীয় বিদেশে থাকেন। সাংবাদিকদের বলা হয় সমাজের দর্পণ। আপনারা জনগণকে তথ্যগুলো পৌঁছে দেবেন যাতে তারা উপলব্ধি করতে পারেন যে পেনশন স্কিমের আওতায় আসা দরকার। কিন্তু সরকারের লাভের জন্য পেনশনের এই উদ্যোগ নেয়নি। আপনাদের নিরাপত্তার জন্যই করেছে। কেউ যদি মারা যান, তার নমিনি পেনশন পেতে থাকবেন। সেজন্যই এই উদ্যোগ। সরকারি চাকরিজীবীদের স্ত্রী, সন্তানরাও এর আওতায় আসতে পারবেন। ৬০ বছর বয়সের পরে মানুষের কর্মক্ষমতা অনেকটা কমে যায়, তখন আপনার অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা চলে আসবে।
এসময় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই পেনশন স্কিম নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকার সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি পেনশন স্কিম কার্যক্রম চালু করেছে। এটি নিয়ে শঙ্কা বা বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।
এসময় তিনি 'প্রবাস স্কিম' 'প্রগতি' সুরক্ষা ও সমতা স্কিমের বিস্তারিত বর্ণনাও দেন। সেই সঙ্গে আগামীতে সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বড় পরিসরে মেলার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। এসময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. দেদারুল ইসলাম পেনশন স্কিম সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।