নগর সংবাদ।।স্বামী নুরুজ্জামান দেওয়ানের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন স্ত্রী রাহিমা খাতুন। সেই মামলার শুনানি উপলক্ষে আদালতপাড়ায় এসে স্ত্রীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন তিনি।
বুধবার (৩ আগস্ট) পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নুরুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরুল ইসলামকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে সাধারণ জনতা। আর রাহিমা খাতুন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
এদিকে রাহিমা খাতুনকে আহত করার ঘটনায় তার বোন মোসা. সারমিন আক্তার বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) নুরুজ্জামান ও কামরুলকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
সেই মামলায় দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক অনিল চন্দ্র রায়।
আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট আকতার হোসেন সোহেল রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানিকালে বিচারক নুরুজ্জামানের উদ্দেশ্যে বলেন, একজন স্ত্রীকে কীভাবে স্বামী এমনভাবে মারতে পারে?
তখন আকতার হোসেন সোহেল বলেন, বিবাহ বলবৎ থাকা অবস্থায় স্ত্রী আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্কে থাকলে কার মাথা ঠিক থাকে। কারো মাথা ঠিক থাকার কথা না। বাচ্চা নিতে চাইলে স্ত্রী বাচ্চাও নিতে চায় না। সে স্বাধীনভাবে ঘুরতে চায়। রাগের বশবর্তী হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন মামলা হয়েছে। ভুল-ত্রুটি করেছে। প্রায়শ্চিত্য করুক। তবে তাদের রিমান্ডে না দিয়ে প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, নুরুজ্জামান ভিকটিম রাহিমা খাতুনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৮ সালের মার্চে কক্সবাজার নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীকে নুরুজ্জামান রাহিমাকে বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়। আপস-মীমাংসার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে নুরুজ্জামান যৌতুকের জন্য রাহিমাকে যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। গত বছর ১০ মার্চ রাহিমাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেন নুরুজ্জামান। এ ঘটনায় রাহিমা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা করেন, যা আদালতে বিচারাধীন।
বুধবার (৩ আগস্ট) মামলাটি শুনানির জন্য ধার্য ছিল। রাহিমা কোর্টে আসবেন জেনে সারমিন আক্তারও সকাল সোয়া ৯টার দিকে বাসা থেকে রওয়ানা দেন। সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাডভোকেট রুবেল মিয়া রাহিমার মোবাইল থেকে সারমিনকে ফোন কল করেন। তিনি বলেন, রাহিমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। সারমিনকে দ্রুত সেখানে যেতে বলেন।
সারমিন সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাহিমা কোর্ট এলাকায় এসে তার আইনজীবীর চেম্বারে যাওয়ার পথে সাড়ে ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানাধীন ১৬/৩ কোর্ট হাউস স্ট্রিট, মানিক স্টোরের সামনে নুরুজ্জামানের সঙ্গে রাহিমার দেখা হয়। মামলা তুলে নিতে তাকে হুমকি-ধামকি দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। রহিমা এর প্রতিবাদ করলে নুরুজ্জামান তাকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। সে উঠে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে কোমর থেকে দা বের করে রাহিমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নুরুজ্জামান। রাহিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে কামরুল হাতুড়ি দিয়ে তাকে এলোপাতারি আঘাত করে আহত করেন। এ সময় সাধারণ মানুষ তাদের ধরে ফেলে।