প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ৯, ২০২৫, ৮:১২ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ৯, ২০২৫, ৩:৩৮ অপরাহ্ণ
ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা কোলাকুলি করে শান্তি চুক্তি মেলবন্ধন অনুষ্ঠিত
ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা কোলাকুলি করে শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠান
ঢাকা প্রতিনিধি।।
রাজধানীর ঐতিহাসিক ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায়ই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। কখনো কখনো তা ব্যাপক সংঘর্ষে রূপ নেয়। শিক্ষার্থীদের এ সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যেমন বিপাকে পড়তে হয়, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোরও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাস্তায় চলাচল করা সাধারণ মানুষদেরও।
অবশেষে এই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমঝোতা করতে অভিনব এক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ডিএমপির নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম মাহফুজুল হক। আয়োজন করা হয় এক শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠান। যেখানে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা একে অন্যকে ফুল দিয়ে এবং কোলাকুলি করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে। তবে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা এ শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি।
রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এ শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠান। এ সময় দুই কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নিউমার্কেট থানার ওসি একে এম মাহফুজুল হক, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস, আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হকসহ দুই কলেজের অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে বরণ করে। এ সময় দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে। এ সময় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। পরে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের আনা মিষ্টি খাওয়ানো হয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের।
ঢাকা কলেজের দ্বাদশ বর্ষের শিক্ষার্থী ইস্রাফিল মোহিম বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারবার মুখোমুখি অবস্থানে গেছে। আমাদের দুই কলেজের সহপাঠীদের এ মুখোমুখি অবস্থানকে সুসম্পর্কে উন্নতির জন্য দুই কলেজের শিক্ষকরা মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমরা এখন থেকে ভাই ভাই। আমরা কোনো ধরনের ঝগড়ায় না জড়িয়ে এখন থেকে পড়াশোনা করে দেশ গঠনে মিলেমিশে কাজ করবো।আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক আহম্মেদ ফাহিম বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দুঃসম্পর্ক আজ থেকে সুসম্পর্কে পরিণত হলো। কিছু ভুল ভ্রান্তি থেকে আমাদের মধ্যে ঝামেলা ছিল। এখন থেকে আমাদের এ মেলবন্ধন আজীবন থাকবে। যাতে আমারা আমাদের শিক্ষকদের মান উঁচু করতে পারি। আমাদের মধ্যে কম্পিটেশন থাকবে, তবে তা পড়াশোনা ও রেজাল্টের দিক দিয়ে।
আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাম্মদ রেযওয়ানুল হক বলেন, তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেতের মধ্যে মারামারির জন্য একে অন্যকে দায়ী করে। আসলে এর জন্য দায়ী মোবাইল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্রোল করে। যা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়। তাই খারাপ দিক বাদ মোবাইল ফোনের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। খারাপভাবে ব্যবহার করা যাবে না। আজকে দুই কলেজের মধ্যে যে মিলন হলো, সেটি যেন অব্যাহত থাকে।এ সময় তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে আইডিয়াল কলেজের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দের। জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা দেখেছি তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা কীভাবে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে। পরে তারা আবার একসঙ্গে ত্রাণ দিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের মধ্যে আবার বৈরি সম্পর্ক তৈরি হলো। সাম্প্রতি এ ঘটনাটি প্রতিনিয়ত ঘটছিল। যার কারণে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছিল। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। তাই নিউমার্কেট থানার ওসি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।তিনি আরও বলেন, আমরা সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই। আগামী দিনে আমাদের মধ্যে যেন আর কোনো বিরোধ না ঘটে সেই প্রত্যাশা রাখি। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে এখন যেহেতু বিরোধের অবসান ঘটেছে। তাই ওসি সাহেবকে মামলাটি নিষ্পত্তি করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম মাহফুজুল হক বলেন, আমি নিউমার্কেট থানায় যোগদানের পর দেখেছি ঢাকা কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকদিন পর পর মারামারি হয়। কী কারণে মারামারি হয়, সেটা তারাও জানে না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এসব মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম, তারা নিজেরা সমঝোতা করতে রাজি। তাই আজকের এ আয়োজন। আমি আশা করি, এ মেলবন্ধন বজায় থাকবে।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা না আসার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদেরও আসাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো অনিবার্য কারণে তারা আসেনি। পরবর্তীতে তাদেরও আনা হবে। আবার উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হবে।
Copyright © 2025 নগর সংবাদ. All rights reserved.