বাসের ভাড়া বাড়ানোর পর সাধারণ মানুষজন ট্রেনকেই যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মানুষজনকে বেশি ভাড়া গুণেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে যাতায়াত করতে হয়েছে। যা অনেকেরই সাধ্যের বাইরে ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ রেলপথ এবং সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করে থাকে। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকা এবং ঢাকা লাগোয়া জেলা হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য মানুষ ঢাকায় গিয়ে এবং ঢাকা থেকেও অনেক মানুষ নারায়ণগঞ্জে এসে অফিস করেন। একই সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় মানুষ বিভিন্ন কারণে ঢাকা যাতায়াত করেন। ফলে রেলপথ এবং সড়কপথ দুটিতেই সাধারণ মানুষের চাপ থাকে।
তারই ধারাবাহিকতায় যাত্রীদের চাপ কমিয়ে আনতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রতিদিন ৯ জোড়া ট্রেন আসা যাওয়া করতো। সব মিলিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৮টি ট্রেন চলাচল করছিল। এ হিসেবে প্রতিদিন গড়ে এ রেলপথে ১০ হাজারও বেশি মানুষ ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করেন। যা মাসে ৩ লাখেরও বেশি মানুষের যাতায়াত এই রেলপথ দিয়ে।
কিন্তু পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজের স্বার্থে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। প্রথমে কয়েক মাসের জন্য বলা হলেও সেটা আট মাস পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।
সে সময় জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকযুক্ত প্রকল্প পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইন নির্মাণকাজ চলমান। কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই লাইনে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
২৫ জুলাই রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন ও পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন ১ আগস্ট থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।
তিনি বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর রেল লাইনের সঙ্গে সমন্বয় করতে গিয়ে ডুয়েল গেজ লাইনের কাজে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। তবে ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইনটি ডাবল লাইনে উন্নীত হচ্ছে। প্রকল্প দুটির কাজ দ্রুত শেষ করতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নতুন-পুরাতন দুটি লাইনের প্রকল্পের কাজ এক সঙ্গে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের জুন মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের কাজ শেষ হবে।
কলেজ শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরে ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে আমাদের যাতায়াতে অনেক সমস্যা হচ্ছিলো। বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছিল যা আমাদের সাধ্যের বাইরে ছিল। অবশেষে ট্রেন চালু হয়েছে এবং ৫ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ভাড়া বাড়লেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে যাত্রীদের সেবার মান যেন বাড়ানো হয়।
নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যাত্রীদের কথা চিন্তা করে মন্ত্রীসহ আমাদের কর্মকর্তারা মিলে আবার ৮ জোড়া ট্রেন চালু করেছেন। কাজ শেষ হলে পরিপূর্ণভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এতে করে যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। যাত্রীদের সেবার মানও বৃদ্ধি করা হয়েছে।