দুই হাজার টাকা চুরি করে ফেরত চাওয়ায় পরের দিন মা–মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা।।
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনার আগের দিন ওই বাসায় দুই হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছিল। গৃহিণী লায়লা আফরোজ তিন দিন আগে গৃহকর্মীর কাজে যোগদান করা আয়েশাকে টাকা চুরির বিষয়ে সন্দেহ করেন।
তিনি আয়েশাকে বলেন, টাকা ফেরত না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন। এরপরের দিনই লায়লা আফরোজ ও তার মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটে।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের মামালায় প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী জামাল শিকদার রাব্বিকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় স্বামীর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি টিম।
গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনাটির সূত্রপাত সম্পর্কে পুলিশের কাছে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন আয়েশা।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা মোহাম্মদপুর জোনের এসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিন আনুমানিক সকাল সোয়া ৯টার দিকে কোনো কারণে লায়লা আফরোজ আয়েশাকে জাপটে ধরেন। বিষয়টি পরিষ্কার না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভবত আবারও চুরি করতে দেখে ফেলেছিলেন।
লায়লা আফরোজের জাপটে ধরা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে আয়েশা বাসায় থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে একের পর এক লায়লাকে আঘাত করতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত লায়লা তাকে না ছাড়ে ততক্ষণ পর্যন্ত বারবার ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় স্কুলছাত্রী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও হত্যা করে আয়েশা। এর আগে লায়লা আফরোজ ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। মা–মেয়েকে হত্যার সময় একই ছুরি দিয়ে আয়েশার হাতেও জখম হয়।
বুধবার রাতে গ্রেপ্তার অভিযান শেষে মোহাম্মদপুর জোনের এসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিকভাবেই এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের পর গৃহকর্মীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শনাক্ত করা হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের টিম দুই রাত তিন দিন নির্ঘুম থেকে সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে।
তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডের পরপরই গৃহকর্মী আয়েশার কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না, কোনো মোবাইল নম্বরও ছিল না। তদন্তে জানা যায়, সে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় অবস্থান করছে। সেখানে অভিযান চালানো হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর আরও কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়ে অবশেষে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় স্বামীর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটি ল্যাপটপ তারা কোথাও বিক্রি করেছে, তা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া বাসা থেকে লুট করা মোবাইলটি ব্যবহার না করে পানিতে ফেলে দেয় তারা। বাসা থেকে স্বর্ণ বা টাকা–পয়সা লুট করা হয়েছিল কি না, বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে হত্যাকাণ্ডটি গৃহকর্মী আয়েশা একাই ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আয়েশা মোহাম্মদপুর এলাকার জেনেভা ক্যাম্পে থাকে বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের বাসায় কাজ নিতো। তার কাছ থেকে জানা যায়, সাভারের হেমায়েতপুরের ঠিকানা দিলে কেউ তাকে কাজ দিত না, তাই জেনেভা ক্যাম্পের ঠিকানা ব্যবহার করত। এর আগেও একটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছিল, সেই সূত্র ধরেই তাকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসি মামুন আরও বলেন, আয়েশা মা–মেয়েকে হত্যা করে সাভারের হেমায়েতপুরে স্বামীর কাছে চলে যায়। সেখানে গিয়ে স্বামীকে বিষয়টি খুলে বলে, এরপর দুজন মিলে পালিয়ে যায়। ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করার পর লুট করে নিয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধারের অভিযান চালানো হয়। পরে সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। রাত আনুমানিক ১২টার দিকে দুই আসামিকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় উপস্থিত হই।
গত সোমবার মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সপ্তম তলায় নিজ বাসায় গৃহিণী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় মোছাম্মৎ আয়েশা নামের ওই গৃহকর্মী। বেলা পৌনে ১২টার দিকে বাসা থেকে লায়লা আফরোজের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নাফিসা বিনতে আজিজের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদনে নারী পুলিশ কর্মকর্তারা দেখতে পেয়েছেন, মা ও মেয়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মোট ২৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন।
এই ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে ওইদিনই ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত নাফিসার বাবা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। তিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের শিক্ষক