মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিকেলে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনে করে ভাঙ্গায় যান। ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের রেল চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
জনসভায় বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল শুরু হলো। সেই রেলে আজ আমি এই ভাঙ্গায় এসেছি। এটা কখনও কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। আজ আমি আপনাদের পদ্মা সেতু, সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুতে রেললাইনও উপহার দিয়ে গেলাম।
তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২০০১ সালে আমি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। খালেদা জিয়া এসে বলে এখানে হবে না, মাওয়াতে এটা হবে না, সে বন্ধ করে দেয়। আসলে বিএনপি, ওদের তো ধ্বংস করাই চরিত্র। আমরা দ্বিতীয়বার সরকারে এসে যখন পদ্মা সেতু করতে গেলাম, সেই সময় আমাদের দেশের এক স্বনামধন্য ব্যক্তি, সামান্য একটা ব্যাংকের এমডির পদ ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে, তার ৭০ বছর হয়ে গেল, মামলা করল সরকারের বিরুদ্ধে, হেরে গেল, আর সেই ক্ষোভে সে আমেরিকায় হিলারি ক্লিনটনকে বলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল যে, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিলাম। দুর্নীতি করতে আসিনি, সেবা করতে এসেছি, শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না। আমি যখন এই চ্যালেঞ্জ নিই, অনেকেই বলেছে এটা সম্ভব না, পদ্মা নদী, এই খরস্রোতা নদীতে সেতু বানানো বাংলাদেশের টাকায় এটা সম্ভব না। আমি একটা কথা বলেছিলাম, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, সেই মানুষ দিয়ে আমি দেশ গড়ব।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি সেই কথা মাথায় রেখে, জাতির পিতার আদর্শ বুকে নিয়েই ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি জানি, অনেক জ্ঞানী-গুণী আমার সঙ্গে নেই, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়। সেইটাই আমরা করেছি ওই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দিয়ে। আজ সেই সেতুতে রেল আমরা চালু করে দিলাম। বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক চক্রান্ত…, আমার একমাত্র ভরসা এই বাংলাদেশের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের সার্বিক উন্নয়ন তুলে ধরে বলেন, আপনাদের কাছে আমার আবেদন, এত পরিশ্রম করে যে উন্নতি করেছি, হাজার হাজার মাইল রাস্তা-ঘাট-রেল সম্প্রসারণ করে দিয়েছি, সার্বিকভাবে উন্নয়ন করে আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে, এটা করতে পেরেছি, কারণ হলো বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে, সেই কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, নৌকা পদ্মা সেতু, রেল সেতু দিয়েছে। নৌকা এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনে। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে, আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকল। ওই লুটেরা বিএনপি এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, পলাতক, মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে ভেগেছে, অর্থ আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র চোরাকারবারি করেছে, এই হলো বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হলো যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি দিয়েছি। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে, এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কা আপনাদের সব রকম সহযোগিতা দেবে। তাই আপনাদের কাছে আমার এই আহ্বান।
শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু ফরিদপুরবাসীকে উপহার দিয়ে গেলাম। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আগামীতে আওয়ামী লীগকে আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ফরিদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীমুল হকের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।