তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, কোনো বিশেষ পেশার মানুষের জন্য নয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ ধরনের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি সংস্থা ডিপ্লোম্যাটস আয়োজিত ‘ফ্যাক্ট অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট অব ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ সেমিনারে নিজ দপ্তর থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বিষয়টা যখন আজকের বাস্তবতা, তখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশ এ ধরনের আইন তৈরি করেছে কিংবা করছে। আমাদের দেশে যখন ডিজিটাল বিষয় ছিল না তখন এ আইনের প্রয়োজন ছিল না। আজকে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিংবা অনলাইনে একজন গৃহিণীর চরিত্র হনন করা বা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয় তাহলে তিনি কোন আইনের বলে প্রতিকার পাবেন? একজন কৃষক, ছাত্র, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কিংবা একজন রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রে যদি সেটি ঘটে, তাহলে প্রতিকার পাওয়ার জন্য আইনের প্রয়োজন রয়েছে এবং সেই প্রয়োজনীয়তার নিরিখেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।
‘ভারতে দি ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০, পাকিস্তানে দ্য প্রিভেনশন অব ক্রাইম অ্যাক্ট ২০১৬ এবং সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াতেও এ ধরনের আইন করা আছে। একটি ফ্রেমওয়ার্ক আইনের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত দেশগুলো এ ধরনের আইন প্রণয়ন করেছে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ আইন করা হচ্ছে।’
বিশ্ব প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তিনি মন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি জানান, কেউ যদি ফেক-আইডি দিয়ে কিংবা বিদেশ থেকে কোনো অপপ্রচার, গুজব রটনা বা চরিত্র হননে লিপ্ত হয়, তখন তাকে ধরা কঠিন। তখন আমরা সার্ভিস প্রোভাইডারকে ধরি এবং জরিমানা করি। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ যদি গুজব রটায় বা রাষ্ট্র-সমাজবিরোধী অস্থিরতা তৈরি করতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোক, সেই ব্যক্তি ও প্ল্যাটফর্ম দুইয়ের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহণের আইন পৃথিবীর সব দেশেই আছে এবং হচ্ছে।
দেশে ডিজিটাল পদ্ধতির বিস্তার সম্পর্কে ড. হাছান বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে সরকার গঠন করার আগে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করতো মাত্র ৫০ লাখ মানুষ। আজকে ১১ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রায় ৮ কোটি মানুষ। আমরা সরকার গঠন করার আগে আমাদের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা ছিল। আজকে অনলাইন পত্রিকা কত বা কয় হাজার সেটি একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষ অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিকূলতা ও বিগ্রহের শিকার হচ্ছে, অনলাইনে নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে।
অনলাইন অপরাধের উদাহরণ দিয়ে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, পেছনে ফিরে গত কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, রামুর ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর কারণে হয়েছে। সম্প্রতি দুর্গাপূজা উপলক্ষে যে ঘটনা ঘটেছে সেটিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের কারণে। এর আগে যে ছেলেধরা গুজব এবং পদ্মা সেতু করতে হলে সেখানে মানুষ বলি দিতে হবে এমন গুজব রটিয়ে দেওয়া হলো এবং সে কারণে অনেক নিরীহ মানুষ নানাভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলো, সেটিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে।
এসব কারণেই এ আইন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব থেকেই এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে অবশ্যই এ আইনের যাতে অপপ্রয়োগ না হয়, কারো মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কিংবা মুক্তমত-মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় সৃষ্টি না করে সেজন্য সরকার সচেতন আছে এবং সময়ে সময়ে সেজন্য পদক্ষেপও গ্রহণ করা হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মো. আমিন উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। এতে মূল আলোচনায় ব্যারিস্টিার এস এম শফিউল্লাহ রহমান, ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান রাজীব এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কাজল।
এ সময় জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দেশ আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বিধায় করোনার মধ্যেও পৃথিবীর মাত্র ২০টি দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। এই করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো সম্ভবপর হয়েছে দেশ ডিজিটাল হয়েছে বিধায়। দেশে সব মানুষের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।