নগর সংবাদ।।রাজধানীর সবুজবাগে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১২) ধর্ষণের মামলায় রাজু আহমেদ নামে এক রেস্টুরেন্টকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাকে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার সময় আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, আসামির করা অপরাধ লজ্জাজনক, পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক, ভয়াবহ, সুস্থির চিন্তাযুক্ত এবং স্পর্শকাতর, যা আমাদের বিবেককে তাড়িত ও ধ্বংসন করে। যদিও অভিযোগপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামির অপরাধ সংঘটনের কোনো পূর্ব ইতিহাস বা পূর্ব নজির নেই। তথাপি আসামি অপরাধের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক ভিকটিমকে বেছে নিয়েছে।
রায়ে আরও বলা হয়, আসামির উক্তরূপ অপরাধে ভিকটিমের গর্ভে যে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে আসামি উক্ত সন্তানের জৈবিক বাবা। অভিযোগপত্র পর্যালোচনা আসামির বয়স ৩০ বছর মর্মে দেখা যায়। আসামি মানসিকভাবে অনগ্রসর নতুবা ১২ বছর বয়সী শিশুর সঙ্গে কোনভাবেই শারীরিক সম্পর্ক করতো না। ভিকটিম পরিবার ছেলে সন্তানটির তত্ত্বাবধান দাবি করেননি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। আইন শিশুকে পিতৃ পরিচয় দিয়েছে, কিন্তু শিশুটির বাবা-মার যত্ন ভালোবাসা দিতে অক্ষম। আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হলে নবজাতক শিশুটি চিরতরে উক্ত ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে, যে কারণে আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া সমীচীন হবে না মর্মে প্রতিভাত হয়। এমতাবস্থায় আসামি রাজু আহমেদকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া নবজাতক শিশুর ভরণপোষণের ব্যয় তাহার বয়স ২১ বছর পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র বহন করবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভিকটিম সবুজবাগ থানাধীন উত্তর মাদারটেকর এলাকার একটি তিনতলা বাসায় পরিবারসহ ভাড়া থাকতো। সেখানে ভিকটিমের মা ও মামলার বাদীনি এবং তার ছেলের অনুপস্থিতির সুযোগে ভিকটিমকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে আসামি রাজু আহমেদ ভিকটিম এর ভাড়া বাসায় এসে ভিকটিমের পরিবারকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
পরবর্তীতে ভিকটিমের শারীরিক গঠনের পরিবর্তন দেখা দিলে তাকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান, ভিকটিম আট মাসের গর্ভবতী। এরপর ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন ভিকটিমের মা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তৃপ্তি খান আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার বিচারকালে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণে মাধ্যমে বিচার শেষে এ রায় ঘোষণা করা হয়।