দরুদ বলতে ‘সালাত আলান নবী’ অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি পঠিত শুভকামনা, গুণকীর্তন, তার প্রতি আল্লাহর দয়া-করুণা ও প্রার্থনাকে বোঝায়। দরুদ অতীব মর্যাদা ও সম্মানের।
আরবিতে ‘সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ’ বা ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ই হলো- দরুদ।
দরুদ অর্থ শুভকামনা বা কল্যাণ প্রার্থনা। আরবি সালাত শব্দের সমার্থক দরুদ। সালাতের মূল চারটি অর্থ। সেগুলো হলো- শুভকামনা, গুণকীর্তন, দয়া-করুণা ও ক্ষমা প্রার্থনা।
সাধারণভাবে দরুদ বলতে ‘সালাত আলান নবী’ অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি পঠিত শুভকামনা, গুণকীর্তন, তার প্রতি আল্লাহর দয়া-করুণা ও প্রার্থনাকে বোঝায়। দরুদ অতীব মর্যাদা ও সম্মানের। আরবিতে ‘সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ’ বা ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ই হলো- দরুদ।
নবীর প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়েছেন। নবীর প্রতি দরূদ পড়ার অর্থই হলো- আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন ও হুকুম পালন করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ হলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবীর প্রতি সালাত-দরূদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। ’ -সূরা আহজাব ৫৬
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর আস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন। ’ –সহিহ মুসলিম ৩৮৪
হজরত ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের তুলনা আমার বেশি নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমার ওপর দরুদ পড়বে। ’ –সুনানে তিরমিজি ৪৮৪
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না। তোমরা আমার প্রতি দরুদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশকৃত দরুদ আমার কাছে পৌঁছে যায়। ’ –সুনানে আবু দাউদ ২০৪২
হজরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনার পর দরুদ না পড়লে তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদদোয়া করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে যে ব্যক্তি দরুদ পড়ে না তার জন্য হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বদদোয়া করেছেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমীন বলেছেন।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, ‘সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরুদ পড়ল না। ’ (অর্থাৎ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল না)। -তিরমিজি ৩৫৪৫
হজরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরুদ পাঠ করল না। ’ –সুনানে তিরমিজি ৩৫৪৬
হজরত কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম স্তরে চড়লেন তখন বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর পূর্বে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হলো না- সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো কিন্তু সে আপনার ওপর দরুদ পড়ল না- সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতামাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। -বায়হাকি ১৪৬৮
অজ্ঞতার কারণে সমাজে দরূদের নামে বিভিন্ন ধরনের বানোয়াট ও উদ্ভট কথা-বার্তার প্রচলন রয়েছে। অনেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অতিভক্তি প্রদর্শন করে এবং তাকে অধিক সম্মান দেখাতে গিয়ে তার সম্পর্কে এমন উদ্ভট কথাবার্তা বলে থাকে- যা তার জন্য প্রযোজ্য নয়। ফলে দেখা যায়, দরূদের নামে রাসূল সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলা হয়- যা শিরকের পর্যায়ভুক্ত। এমন মনগড়া কাজ কাম্য নয়।
মনগড়া কাজের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসগুলো প্রত্যেক মুসলমানের মেনে চলা উচিত- যেন সংক্ষিপ্ত ও অতি মূল্যবান জীবনে ব্যয়কৃত সময়, সম্পদ এবং অন্যান্য যোগ্যতা কিয়ামতের দিন ধ্বংস না হয়ে যায়।