অমর নায়ক সালমান শাহ’র ৫৩’তম জন্মদিন বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর)। বেঁচে থাকলে আজ তিনি ৫৩ পূর্ণ করে ৫৪’তে পা দিতেন।
সালমানের মৃত্যুবার্ষিকী এবং জন্মদিন এলেই যে তাকে নিয়ে আলোচনা হয় এমনটি নয়। পুরো বছরজুড়ে নানান কারণে তিনি আলোচনায় থাকেন। সালমান শাহ’র জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশের নানান অঞ্চলে সালমান ভক্তদের গঠিত ‘সালমান শাহ ফ্যান ক্লাব’র সদস্যরা তার জন্মদিন উদযাপন করছে। তবে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতি’ সালমান শাহ’র জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশেষ কিছু করছে না।
সালমান শাহ’র জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়। যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউজ’।
সালমানের নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানও তাই সেই নানার কারণেই আসা। স্কুলে পড়ার সময় সালমান শাহ বন্ধুমহলে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। । ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাস করেছিলেন তিনি।
চলচ্চিত্রে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক। যদিও বা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায় অভিনয় করেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পান সালমান শাহ। কিন্তু তার আগেই তিনি নাটকে অভিনয় করেন। মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ’র অভিনয় জীবন শুরু হয়। ওই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তৌকীর আহমেদ অভিনয় করলেও সালমান শাহ’র চরিত্রটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরবর্তীতে আরো বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেও দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন সালমান।
সিনেমার পাশাপাশি নাটকেও তার উপস্থিতি দর্শকের মধ্যে ভীষণ সাড়া ফেলেছিলো। যদিও বা মৌসুমীর সঙ্গে সিনেমাতে সালমানের অভিষেক হয়। পরবর্তীতে মৌসুমীর সঙ্গে আরো দুটি সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন। শাবনূরের সঙ্গেই বেশি সিনেমাতে অভিনয় করেছেন সালমান শাহ। এই জুটিকে এখনো সিনেমার অন্যতম সেরা জুটি হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। সালমান শাহের সঙ্গে জুটি হয়ে আরও অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা, শিল্পী, শ্যামা, সোনিয়া, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি।
জীবদ্দশায় সালমান শাহ নিজের অভিনীত যেসব সিনেমার সফলতা উপভোগ করে যেতে পেরেছিলেন সেই সিনেমাগুলো হলো ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘তুমি আমার’,‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখি’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রেম যুদ্ধ’,‘ কন্যাদান’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’, ‘বিচার হবে’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘ প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’ ও ‘স্বপ্নের পৃথিবী’।
সালমান শাহ’র জীবদ্দশায় সর্বশেষ ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ সিনেমার সাফল্য উপভোগ করে যেতে পেরেছিলেন। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই। সালমান শাহ যেদিন মারা যান সেদিন রায়হান মুজিব পরিচালিত ‘আখেরী মোকাবেলা’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। আর এর পরের সপ্তাহ অর্থাৎ ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৯৬) মুক্তি পেয়েছিল ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমাটি।
সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর যে সিনেমাগুলো একের পর এক দর্শকের কাছে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয় এবং ব্যবসাসফল হয়, সেই সিনেমাগুলো হচ্ছে ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘জীবন সংসার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শুধু তুমি’, ‘আনন্দ অশ্রু’ ও ‘বুকের ভেতর আগুন’।
সালমান শাহ’র মৃত্যুর ঠিক এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ছিলো ‘বুকের ভেতর আগুন’।