নগর সংবাদ।।নারায়ণগঞ্জ সিটি করপারেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের গণটিকাদান কর্মসূচিতে -বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি বাকবিতন্ডা থেকে হাতাহাতির ঘটনা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপারেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের গণটিকাদান কর্মসূচিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে ৬০০ টিকার ব্যবস্থাপনা থাকলেও টিকা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। সিরিয়ালে দাড়ায় ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষ। দিনব্যাপী সিরিয়াল দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তাদের টিকা শেষের ঘোষণায় ক্ষিপ্ত হয় ওয়ার্ডবাসী। রবিবার (৮ আগস্ট) সরেজমিনে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ডে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন ওয়ার্ডবাসী।
তবে এসব টিকাকেন্দ্রে উপচে পড়া ভীড় হওয়ায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মানুষের মাঝে বাকবিতন্ডা থেকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একই সাথে টিকা গ্রহণে উঠেছে স্বজনদের প্রীতির অভিযোগ। লাইনের পাশে দিয়ে কিছু লোক ভেতরে গিয়ে টিকা গ্রহণ করার ঘটনা ঘটে। যার ফলে সকালে এসেও টিকা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। এ ছাড়া টিকা নিতে আসা জনগণের মাঝে ছিল না কোন সামাজিক দূরত্ব।
এমনকি অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক। অধিকাংশ ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। সিটি করপোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডে অস্থায়ী টিকা কেন্দ্রে টিকা গ্রহণ করতে আসেন হাজার হাজার ওয়ার্ডবাসী। টিকা না পাওয়ার শঙ্কায় মানুষের ঠেলাঠেলিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন একজন নারী। অসুস্থ নারীর ছেলে বাপ্পী জানান, সিরিয়ালে দাড়ায় হাজার হাজার মানুষ। টিকা দিব মাত্র ৬০০ জনরে।
মানুষের ঠেলাঠেলিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আমার মা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সিদ্ধিরগঞ্জের ৫ নং ওয়ার্ডের রেবতী মোহন পাইলট স্কুল এন্ড কলেজে ওই ওয়ার্ডবাসীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকেই সিরিয়ালে দাড়ায় হাজার হাজার মানুষ। তবে দুপুর ১২ টার পর একাধিক মানুষ টিকা গ্রহণ না করেই ফিরে যান। তাদের মধ্যে অনেকেই স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেন, “যাদের নিজস্ব মুখ পরিচিত লোক থাকে, তারা টিকা দিতে পেরেছে। আমার পরে এসেও অনেকে টিকা নিয়েছে কিন্তু আমি সকালে এসেও টিকা দিতে পারি নাই।” ১০ নং ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (২) দুপরে সিরিয়ালে থাকা মানুষদের পুনরায় অন্যদিন টিকা দেওয়া হবে বলে জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। এসময় বাকবিতন্ডার ঘটনাও ঘটে। গার্মেন্টসকর্মী আশা আক্তার বলেন, “প্রথমে বলেছে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য।
পরে লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর দুপুর ১ টার সময় বলছে টিকা শেষ। আজকে ছুটি নিয়ে আসছি, আরেকদিন আসলে দুইদিন গার্মেন্টসে এভসেন্ট করে দিবে। প্রথমেই যদি সিরিয়ালে দাড়াতে না করত তাহলে এত ঘন্টা দাড়ায় থাকা লাগত না। ১৩ নং ওয়ার্ডের আদর্শ স্কুলে ওয়ার্ডবাসীকে টিকা দেওয়া হয়। এখানে টিকা গ্রহণে কোন সমস্যা দেখা যায়নি । তবে একদিকে কেন্দ্রে ছিল উপচে পড়া ভীড়, অন্যদিকে জনগণের মুখে ছিল না মাস্ক। সেই সঙ্গে তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতেও দেখা যায়নি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর ফারুক ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্রের বিশৃৃঙ্খলা প্রসঙ্গে বলেন, আমি চেষ্টা করেছি যারা টিকা গ্রহণ করতে এসেছে তাদের মধ্যে সিরিয়াল ঠিক রাখার জন্য।
কিন্তু টিকার চেয়ে অধিক মানুষ আসায় সিরিয়াল ঠিক রাখতে সমস্যা হয়েছে। এরপর ১৪ তারিখ থেকে আমরা দুটি স্থানে টিকা দিবো। মাঠে প্যান্ডেল করে টিকার ব্যবস্থা করব। আশা করি তখন এই সমস্যা হবে না। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেডিকেল অফিসার শেখ মোস্তাফা আলী এ বিষয়ে বলেন, আমরা ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসনে চিঠি পাঠিয়েছি। ওয়ার্ডের টিকাকেন্দ্রে এই বিশৃঙ্খলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণ করা কথা।
নিয়মমেনে টিকা দেওয়ার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের , শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের ২১ জন লোক টিকা কর্মসূচিত্বে বিভিন্ন দায়িত পালন করছে। সেই সাথে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ তার নিজস্ব লোকজন উপস্থিত থাকেন। তবে দৈনিক টিকার পরিমাণের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় এখন সমস্যা হচ্ছে। টিকার কার্যক্রম কয়েকদিন চললে এই সমস্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে।