নগর সংবাদ।।নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সমাজসেবা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম -দরিদ্র, এতিম, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীর দেড় কোটি টাকা পলায়ন
গরীবের টাকা নিয়ে উধাও সমাজসেবা অফিসার প্রান্তিক মানুষদের মধ্যে দুস্থ, অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র, এতিম, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীসহ প্রায় ২৮টি খাতে গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত দেড় কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছেন মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম নামে সমাজসেবা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন ওই কর্মকর্তা। হাতিয়া উপজেলায় গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনাকালীন যতো ভাতা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেসব ভাতা যথাযথ ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ না করে কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছিলেন ওই কর্মকর্তা। গত ডিসেম্বরে ভাতাপ্রাপ্তদের টাকা সঠিকভাবে বণ্টন হয়নি মর্মে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নজরে আসলে তিন সদস্যের নিরীক্ষা তদন্ত কমিটি গঠন করে সংস্থাটি। সেই সংগে ওই কর্মকর্তাকে গত ১৯ জানুয়ারি হাতিয়া সমাজসেবা কার্যক্রম থেকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে অধিদফতরে বদলি করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সামাজিক নিরাপত্তার ২৮টি খাতে বরাদ্দকৃত এক কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় হাতে পাওয়ার আগেই গত ১ এপ্রিল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন অভিযুক্ত সেই কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। এমনকি তিনি কোথায় আছেন সে তথ্যও জানতে পারছে না মন্ত্রণালয়। এই অবস্থায় গত ১৯ মে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আখতার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই আদেশে বলা হয়, তৌহিদুল ইসলামের কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩-খ, গ ও ঘ বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ, পলায়ন এবং দুর্নীতি পরায়ণের পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তবে হাতিয়া সমাজসেবা সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, তদন্তে দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেলেও বাস্তবে এই টাকা তিন থেকে সাড়ে তিন কোটির মতো। তাই বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্তের আহ্বান তাদের। অন্যদিকে, সমাজসেবা অধিদফতরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা
জানান, তৌহিদুল ইসলাম যে অপকর্ম করেছে তা সংস্থাটির ভালো কাজগুলোকে ম্লান করে দিয়েছে। তাই অচিরেই তার কঠোর শাস্তির দাবি তাঁদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ আলম বলেন, অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে। সে অনুযায়ী তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও গভীর তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি তার অপকর্ম প্রমাণিত হয় তবে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হবে। পাশাপাশি দুদক চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। সে অনুযায়ী শাস্তি কঠোর শাস্তি হিসেবে কারাগারেই তাকে যেতে হবে তিনি বলেন, আমরা কারো অপকর্মের দায় নেবো না। যে কর্মকর্তাই অপরাধ করবে, সে অনুযায়ী শাস্তিও পাবে। কোনো ছাড় নেই। তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও কল রিসিভ করেননি তৌহিদুল ইসলাম। জানা গেছে, তৌহিদুল ইসলাম-এর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারে। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।