নগর সংবাদ।। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, আমরা ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়। আমাদের চর্বি মোটা হয়ে গেছে। সবার মাথায় ঢুকছে নৌকা পেলেই পাস। স্টপ ইট। যারা মনে করেন নৌকা পেলেই পাস তারা রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। মনে রাখতে হবে জনগণ পাশে থাকলে পাস।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এর আগেই অনেক খেলা হবে। শকুন আকাশে উড়ছে। তাই আগে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। যারা প্রকৃত ত্যাগী কর্মী তারাই তো নির্বাচন করবেন।
সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে নগরীর চাষাড়াস্থ নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মীসভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা, সদর থানা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দসহ সহযোগি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি মনে করি আজই আমার শেষ দিন। আমরা এমন নারায়ণগঞ্জ চাই যেখানে সন্ত্রাস, মাদক, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। তাই দেশের অন্য এলাকার আগে আমাদের ঘণ্টা বাজাতে হবে। কারণ সামনের ৬ মাস বেশ কঠিন সময়। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এ ৬ মাস খুবই ভয়াবহ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ৩টি স্থাপনার (নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিঙ্ক রোড, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ও চাষাড়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-আদমজী সড়ক) নাম আমার বাবা, মা, ভাইয়ের নামে করেছেন। আমরা খুশি হয়েছি, চোখে পানি এসেছে, নামাজ পড়েছি, আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। আপনারাও খুশি হয়েছেন। এইটা নাকি টাকা-পয়সা দিয়ে কেনা হইছে। এতে খোকন সাহা উত্তেজিত হয়েছেন। এই নিউজ আমাকে পাঠাইছে আমি দেখিও নাই। ছাগল-পাগল-কুত্তা-বিলাই কিছু কইলে তাতো শুনতে হয় না।
শামীম ওসমান বলেন, আমাদের বারের সভাপতি মোহসীন সংক্ষুব্দ হয়েছেন। তিনি একটি মামলা রুজু করেছেন। আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে কতৃজ্ঞতা জানাচ্ছি মহসিন ও খোখন সাহাকে। আপনারা আপনাদের নেতার প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করবো এই মামলা আপনারা প্রত্যাহার করে নিবেন। এদের বিরুদ্ধে মামলা করার দরকার নাই। এরা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না যে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
মাসদাইর কবরস্থানে বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরে শ্মশানের মাটি ফেলা প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এরচেয়ে বেশি কস্ট পেয়েছি আমার বাবা-মা ভাইয়ের মৃত্যুর পর। আল্লাহর কাছে কেঁদেছি।
শামীম ওসমান বলেন, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির মানে এটা না যে আমি হিন্দুরের মন্দিরে গরু জবাই করে দিবো। সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি হলো যখন দূর্গা পূজা হয় তখন মসজিদের আজানের শব্দ শুনে ঢোল বাজানো বন্ধ করে দেয়। এক ধর্মের প্রতি আরেক ধর্মের সম্মান। আমার বাবা-মা-ভাইয়ের কবরে শ্মশানের মাটি দেয়া হয়েছে এটা আমি মেনে নিতে পানি না। আমার খুব কস্ট হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কবরও তিনফুট মাটি দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কার কবর কোনটা বুঝাই যাচ্ছিলো না। আমি ভাবছিলাম এই কস্টটা আমি নিতে পারবো না। এই জন্য আমি নারায়ণগঞ্জে আসা বাদ দিয়ে দিয়েছি। কারণ এই কষ্টের কারণে যদি আমার চোখের পানি পড়তো বা এই কষ্টের বহিঃপ্রকাশ যদি আমার মুখ দিয়ে বের হতো, তাহলে নারায়ণগঞ্জের মাটিতে শুধু মাথা দেখা যাবে, মাটি দেখা যাবে না। অতটুকু মানুষ নামানোর ক্ষমতা আমার কর্মী ভাইদের আছে। তাই আমি বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি। এইগুলো আল্লাহই দেখে নেবেন।
এক পর্যায়ে তিনি নাসিক মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার বাপ-দাদার কবরে আপনি মাটি দেয়ার কে?
শামীম ওসমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বিকল্প মা। তাই তার সঙ্গে কথা বললে অধিকার নিয়ে কথা বলি। একদিন তিনি আমাদের বলেছেন, ‘শামীম আমি হলাম নীলকণ্ঠি। আমি বিষ খেয়েও হজম করতে পারি।’ তার সে কথা আমি অনুসরণ করি। নেত্রী যদি সব হজম করতে পারেন তাহলে আমরা কর্মীরা কেন পারবো না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাকে নিরাপদ রাখতে হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম তাদেরই লড়াই করতে হবে। মাঠে থাকতে হবে। এ কারণে আগামী অক্টোবরের শুরুতে একটি বড় সমাবেশ করবো। এর আগে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে আমরা কর্মীসভা করবো। এরপর আমরা রাস্তায় নামবো।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দনশীল, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ রশিদ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতি, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মহসিন মিয়া, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসরাত জাহান স্মৃতি, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. জুয়েল হোসেন ও মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ।