কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে মেলে ২৯ বস্তা টাকা। টাকার বস্তার পাশাপাশি মেলে প্রায় এক বস্তা চিঠিও।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকালে পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স (সিন্দুক) ও দুটি ট্রাঙ্ক তিন মাস ১৪ দিন পর খোলা হয়।
এরপর দিনব্যাপী গণনার পর দানবাক্স থেকে পাওয়া যায় রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এছাড়াও স্বর্ণ ও রূপাসহ বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রাও পাওয়া গেছে।
এক বস্তা চিঠি পাওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি চিঠি ভেসে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এসব চিঠি থেকে নানা মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার আকুতি কথা জানা যায়।
এক নারীর এক চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘আমি একজন সৌদিয়ানকে ভালোবাসি। হে মহান আল্লাহ, তুমি তাকে আমার করে দাও। আমি যেন তাকে বিবাহ করতে পারি (সুম্মা আমিন)। হে আমার রব, তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। হে রব, তুমি আমাকে নবীর দেশে পবিত্র মাটিতে জন্ম গ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছ। আমি যেন আমার সেই সৌভাগ্য নিয়ে তোমার পবিত্র মাটিতে মৃত্যুবরণ করিতে পারি। যে আমার চিঠিখানা পড়িয়াছেন, আমাদের জন্য দোয়া করবেন, নেক আশা করিয়া চিঠিখানা লিখেছি। ’
এক পুরুষ তার চিঠিতে লেখেন, ‘আল্লাহ আমি তোমার এক বান্দিকে আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। আল্লাহ, আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে তোমার এবাদত করতে চাই। সে যদি আমার নসিবে থাকে, তাহলে তোমার রহমতের দ্বারা তাকে আমার সঙ্গে মিলিয়ে দাও। সে যদি আমার নসিবে নাও থাকে, তাহলে তুমি তাকে আমার নসিব করে দাও। আল্লাহ তুমি তো সবার মন পড়তে পারো, তুমি ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দাও। আল্লাহ, তুমি তাকে আমার সহধর্মিণী করে দাও। আল্লাহ, তোমার পরে যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি, তাহলে সেটা ওকে। ’
এসব চিঠির বিষয়ে ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকত উদ্দীন ভূঞা জানান, এবার দানবাক্সগুলোতে ২৯ বস্তা টাকার সঙ্গে প্রায় এক বস্তা চিঠি পাওয়া গেছে। অন্যবারের তুলনায় এবার চিঠির সংখ্যাটা বেশি। এসব চিঠিতে নানা মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার আকুতি জানিয়েছেন দানকারীরা।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে আনুমানিক চার একর জায়গায় ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ অবস্থিত। প্রায় আড়াইশ বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে ইতিহাস সূত্রে জানা যায়। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনেক কাহিনি প্রচলিত আছে, যা ভক্ত ও মুসল্লিদের আকর্ষণ করে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস, এখানে মানত করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। আর এ কারণেই মূলত দূর-দূরান্তের মানুষও এখানে মানত করতে আসেন।