মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মোতাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বাবা আব্দুর রহিম মৃধা পেশায় একজন দিনমজুর। জন্মগতভাবেই ছেলে রাসেল মৃধার দুই হাত নেই। ডান পা নেই, বাম পা রয়েছে, তাও আবার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট। পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে ছোট বেলা থেকে পড়ালেখা চালিয়ে আসছে রাসেল। একদিকে প্রতিবন্ধী, অন্যদিকে অভাব-অনটনের মাঝেও রাসেলের পড়াশোনার প্রতি আলাদা স্পৃহা দেখে তার দরিদ্র বাবা-মা হাল ছাড়েননি। রাসেল এর আগে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা ও দাখিল পরিক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়।
পা দিয়ে লিখে আলিম পাস করেছেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রাসেল মৃধা। উপজেলার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
রাসেল মৃধা বলেন, আলিম পাশ করায় আমি খুব আনন্দিত। আমার লেখাপড়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান মা-বাবার। তারা আমার মত একজন প্রতিবন্ধী ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। পাশাপাশি দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার মতো একজন প্রতিবন্ধী মানুষকে যেন একটা সরকারি চাকরি দেন। আমি চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করতে চাই। আমার পরিবারের দায়িত্ব নিতে চাই।
রাসেল মৃধার বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েও দুই পরীক্ষায় পাস করেছে। সেজন্য আমিসহ আমার পরিবার অনেক আনন্দিত। অভাব-অনটনের মধ্যেও আমার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ করিনি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলে তার মনোবল ও ইচ্ছা শক্তিতে আজ সে আলিম পাস করেছে। সেজন্য আমরা সবাই অনেক খুশি। আমার ছেলের এ সফলতার পেছনে শিক্ষকদের অনেক শ্রম রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি চির কৃতজ্ঞতা। আমার ইচ্ছা সে এভাবে এমএ পাস করে উচ্চ শিক্ষা শেষে তার যোগ্যতায় সে চাকরি করবে। সেজন্য আমার যত কষ্টই হোক আমি ছেলের জন্য তা করবো। তবে সরকারের কাছে একটাই দাবি, লেখাপড়া শেষে রাসেলকে যেন একটি সরকারি চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।
সিংড়ার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মোতাররফ হোসেন বলেন, রাসেল মৃধার দুই হাত নেই, একটি পা আছে সেটাও স্বাভাবিক নয়। পায়ের আঙুল দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেয়। রাসেল নানা প্রতিকূলতার মাঝেও পড়াশোনা করে যাচ্ছে, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তিনি দারিদ্র পরিবারের সন্তান এবং প্রতিবন্ধী। ধন্যবাদ জানাই তার মা-বাবাকে।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩ দশমিক ২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া ২০২২ সালে জিপিএ-৩ দশমিক ৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। তার ইচ্ছা শক্তির কারণে আজ তিনি এত দুরে পৌঁছে গেছে। তার জন্য দোয়া করি, তিনি পড়াশোনা শেষ করে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করুক।
পাশাপাশি পড়াশোনা শেষে যেন প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে সেজন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন অধ্যক্ষ।