নগর সংবাদ নিউজ ডেস্ক।।পুলিশের কারিশমা-কোন আইনে আছে ?-ছেলের অপরাধে মাকে ১০ঘন্টা আটকের সাজা
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মামলার আসামী ছেলেকে না পেয়ে মাকে থানায় ডেকে নিয়ে ১০ ঘন্টা আটকে রাখলো এক এস আই। বিষয়টি জানতে পেরে গণমাধ্যমকর্মীরা অসংখ্যবার ওই এস আইকে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ওই নারীকে দুইজনের জিম্মায় ছাড়া হয়। তবে এই ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই এস আই। গুণধর ওই এস আইয়ের নাম নুর আলম। টাকার নেয়ার পর ওই নারীকে এমনভাবে শাসিয়ে দিয়েছেন যাতে তিনি টাকার বিষয়টি কাউকে না বলেন। ফলে থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রীতিমত এস আই নূর আলমের ভয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন শিরিনা আক্তার।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় এলাকায়। ছেলের জন্য মাকে দীর্ঘ সময় থানায় আটকের রাখায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ৫ জুলাই।
এলাকাবাসী বলছেন মামলার আসামী পলাতক ছেলের সাথে যদি মায়ের যোগাযোগ থাকে তাহলে তার একমাত্র মাধ্যম মোবাইল। পুলিশ মোবাইল কললিষ্ট এর সূত্রধরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীর অবস্থান নিশ্চিত করে তাকে কেনো গ্রেফতার না করে মাকে ১০ ঘন্টা থানায় আটক করে রাখলো। এর নেপথ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। জানা গেছে, একটি শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ এনে ওই শিশুর মা তানিয়া (২৫) সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় শিরিনা আক্তারের ছেলে মানিক (২২)কে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার পর থেকে মানিক পলাতক রয়েছে। তবে মামলায় ধর্ষণ চেষ্টার যে ঘটনাস্থল পাইনাদী এলাকার জিয়ার রিক্সার গ্যারেজ দেখানো হয়েছে। সে গ্যারেজের কেউ এ বিষয়টি জানেন না। মামলায় উল্লেখ করা হয় গত ৪ মে বিকেল ৫টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে।
এরপর থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নুর আলম মানিককে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য মা শিরিনাকে চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে থানায় ডেকে নিয়ে আটক করে রাখে। তাকে বলে ছেলেকে পুলিশের কাছে তুলে দিতে। যতক্ষন পর্যন্ত মানিক থানায় এসে ধরা না দেয় ততক্ষন পর্যন্ত থানায় আটক করে রাখা হবে। না হলে তাকেও মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
মানিকের মা শিরিনা জানান, গত মে মাসে আমার ছেলে মানিককে ধর্ষণ চেষ্টার মামলায় আসামী করে মামলা করে তানিয়া। এ ঘটনার বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। মামলার পর আমার ছেলে মানিক বাসায় কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত আমাদের কারো সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। আমি জানি না আমার ছেলে মানিক এখন কোথায় আছে।
এ দিকে মামলার পর থেকেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) নূর আলম রাতের বেলায় বাসায় গিয়ে বিভিন্ন ভয়-ভীতি দেখায়। আমার ঘরে কোন পুরুষ মানুষ থাকে না জেনেও মানিক বাসায় আছে এ কথা বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেয়। আমি জোর পূর্বক দরজা খুলে ফেলি। এর পর থেকে উপ-পরিদর্শক (এস আই) নূর আলমের ভয়ে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য মামলার বাদী তানিয়া দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। এবং এসআই নূর আলম মামলাটি শেষ করার জন্য কিছু টাকা পয়সা খরচ হবে বলে জানান। এ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এসআই নূর আলমের গালিগালাজ ও হুমকির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। আমি তাকে দেখলেই দৌড়ে পালিয়ে যাই।
এক পর্যায়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর আলম বাসায় গিয়ে বলে আসে থানায় বসে বাদীকে নিয়ে বিয়ষটি আপোষ মিমাংসা করে দেওয়া হবে। আমি এ কথা বিশ্বাস করে গত ৫ জুলাই সকাল ১১ টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যাই। এর পর আমাকে নিয়ে ওসি তদন্তের রুমে আটক করে রেখে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়।
ওই সময় আমার সাথে থাকা আমার মেয়ে ও আমার এক আত্নীয়কে বের করে দিতে চাইলে আমি তাদেরকে জড়িয়ে ধরে রাখি। তাদেরকে বলি আমাকে ছেড়ে তোমরা কোথাও যাবে না। পরে পুলিশ তাদেরকে আমার সাথে বসিয়ে রাখে।
আমাকে এসআই নূর আলম বলে ওই মহিলা তুই খুব খারাপ। ছেলেকে লুকিয়ে রেখেছিস, তোর সাথে যোগাযোগ আছে। তুই সব জানিস। ওসি তদন্তের রুমে এ ভাবেই আমার সাথে দিনভর চলে অমানবিক আচরণ। আমি ডায়বেটিকস রোগী বলার পরও তাদের খারাপ আচরন থেকে মুক্তি পাইনি।
সারাদিন না খেয়ে থাকার কারনে আমার হাত পা কাঁপতে থাকে, বুক ধরপর করতে থাকলেও আমাকে কোন খাবার দেয়নি। হঠাৎ করে রাত সাড়ে ৯টার পরে তারা আমার সাথে থাকা ২ জনসহ বাহিরে অপেক্ষমান আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলে। পরে সাদা কাগজে ২ জন জিম্মাদারের স্বাক্ষর রেখে তাদের কাছ থেকে কিছু খরচ পাতি নিয়ে ছেড়ে দেন।
এর পরেও আমাকে আবারো শর্ত দেন আগামী ২ দিনের মধ্যে মানিককে নিয়ে থানায় হাজির হতে। না হয় আমাকে আবার ধরে জেলখানায় পাঠাবে। থানা থেকে বাহির হওয়ার পর থেকে আমি এসআই নূর আলমের ভয়ে আর বাসায় ফিরিনি। আমি আমার ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এবং রাত হলেই পরিচিত জনদের বাসায় গিয়ে থাকি। আজ শুক্রবার (৯ জুলাই) এখন পর্যন্ত আমি আমার ছেলেকে খুজে পাইনি। এখন আমি কি করবো জানিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নুর আলম জানান, শিরিনা নিজেই থানায় এসেছেন। ওসি তদন্ত স্যার ডেকেছেন। সঠিক নাম ঠিকানা জানার জন্য। আপনি ওই মহিলার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন এবং এটুকু জিজ্ঞাবাদের জন্য ৯/১০ ঘন্টা থানায় আটক করে রেখেছেন কেনো জানতে চাইলে এস আই নুর আলম বলেন, ওইদিন আমি ডিউটিতে ছিলাম আমার কিছু জানা নেই, ওসি তদন্ত স্যার সব জানেন। আমি কিছু বলতে পারবোনা আপনি স্যারের সাথে কথা বলেন। এরপরই তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে তাকে বলা হয় এসআই নুর আলম জানিয়েছেন আপনি শিরিনাকে ডেকে নিয়ে এসেছেন এর উত্তরে তিনি জানান, মামলার স্বার্থে মহিলাকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ১০ ঘন্টা আটক, দুইজন জিম্মাদারের স্বাক্ষর ও অনৈতিক সুবিধার বিষয়টি সঠিক নয়। মামলাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এমন অভিযোগ।