নগর সংবাদ।। ‘আমাকে যখন পুলিশ গ্রেফতার করেছে তখন প্রশ্ন করেছিলাম আমাকে কীসের মামলায় গ্রেফতার করেছেন। তখন পুলিশ গালি দিয়ে আমাকে বলে পাহাড়তলীর মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে তোর।
সেদিন গ্রেফতার করে রামু থানায় একদিন রেখে কক্সবাজার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আমার ঠাঁই হয় কক্সবাজার কারাগারে। আমি যে আসামি নই এটি আমি অনেকভাবে পুলিশকে বলেছি কিন্তু আমার কথা কেউ শুনেনি। আমার জীবন থেকে বিনা দোষে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো দিন। ’ বলছিলেন পুলিশের ভুলে কারাভোগ করা জাসেদুল হক।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জামিনে বের হয়ে এই কথা বলেন। জাসেদুল হক, কক্সবাজার জেলার রামু থানার রাজাকুল সিকদার পাড়ার ওবায়দুল হকের ছেলে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজারকুল বাজার সিকদার পাড়া স্টেশনের ইত্যাদি স্টোর থেকে রামু থানা পুলিশ জাসেদুল হককে গ্রেফতার করে।
জাসেদুল হক প্রকৃত আসামির বদলে কক্সবাজার কারাগারে ছিলেন। নামের মিল থাকার কারণে প্রকৃত আসামির বদলে কোনো কিছুর মিল না থাকায় একজনের স্থলে আরেকজন জেল খাটার বিষয়টি গত ২৮ জুন কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলমকে জাসেদুল হক জানান। গত ৩০ জুন কক্সবাজার কারাগারে জেল সুপার মো. নেছার আলম আদালতের নজরে আনেন। গত ৩ জুলাই অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে পিডব্লিউ মূলে জাসেদুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। ওইদিন আদালত জেলখানার ছবি সম্বলিত রেজিস্টার খাতা, নথি পর্যালোচনা করে দেখেছেন বর্তমানে কারাগারে থাকা জামসেদুল হক প্রকৃত আসামি নন। জাসেদুল হক প্রকৃত আসামি হিসেবে হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলে ৬ মাসের জামিন আদেশপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী জাসেদুল হক কক্সবাজার কারাগারে মাধ্যমে প্রকৃত আসামি নন মর্মে আদালতকে জানান। আদালত তার আবেদন এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মামলাটি হাইকোর্টে আপিল দায়ের থাকা আসামির মুক্তির বিষয়ে উচ্চ আদালতে নির্দেশনার কাগজপত্র হাইকোর্টে পাঠান।
আদালত সূত্রে জানা যায়, পাহাড়তলী থানার মামলা নম্বর ০৪(০৩)১১ ও জি আর-১৮২/১১। মামলার দায়রা নম্বর ১৭৩৭/১১। নগরের পাহাড়তলী থানার পশ্চিম নাসিরাবাদ হালিশহর রোডের সামনে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ জাসেদুল হককে গ্রেফতার করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে মাদকের মামলায় ৫ বছরের কারাদণ্ড, ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন জাসেদুল হককে। সাজার পরোয়ানামূলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার কারাগারে যান। গত ২৮ জুন কক্সবাজারের কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলম তাকে কোনো মামলার আসামি নন বলে জানান। গ্রেফতারকৃত প্রকৃত আসামি জাসেদুল হকের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। তখন বর্তমান কারাগারে থাকা জাসেদুল হক মালেশিয়াতে ছিলেন।
কক্সবাজার কারাগার সূত্রে জানা যায়, কারাগারের সংরক্ষিত হাজতি রেজিস্টার পর্যালোচনা করে দেখা যায় সূত্রস্থ মামলা সংক্রান্ত হাজতি নম্বর ২১২৪/এ। গত ২২ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার রামুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন হাজতের পরোয়ানামূলে কারাগারে আসেন। প্রকৃত আসামি ২০১১ সালের ২ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। তিনি ২ মাস ১ দিন কারাভোগের পর চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে ২০১১ সালের ৩ মে জামিন নেন। ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে পলাতক ছিলেন।
জামিন আদেশের মূলে জাসেদুল হককে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মুক্তির আদেশের কপি বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রামের আদালতে আসে। যাবতীয় কার্যক্রম শেষে দুপুর দুইটার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
জাসেদুল হক বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কারাগারে জেলার অফিসে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করেন। এর আগে কোনো দিন জেলার অফিসে আমাকে ডেকে প্রশ্ন করেননি।
আপনার নাম ব্যবহার করেছে এমন কাউকে আপনি চিনেন এমন প্রশ্নের জবাবে জাসেদুল হক বলেন, আমি জাসেদুল হক নামে কাউকে চিনি না। আমার নামে আত্মীয় স্বজন ও গ্রামে কেউ নেই।
আসামি হয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেননি জানিয়ে জাসেদুল হক বলেন, আসামি হিসেবে জামিনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কারাগারে ওকালতনামা পাঠিয়েছে, সেটাতে আমি স্বাক্ষর করেছি। গণমাধ্যমে সংবাদ আসার পরে জেলার বলেছেন বিনা দোষে জেল খাটছোস আমাদের কেন জানাসনি। আমাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করেছে, আমার যা বলার সেই বিষয়গুলো আমি বলেছি। মাদক মামলার আসামিটা আমি নয়, তখন আমি মালয়েশিয়াতে ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন পরে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হয়। আমি আসামি নই, সেটার কাজপত্র থানায় পাঠিয়েছিলাম, যাতে পাহাড়তলী থানায় পাঠায়। আমি বিনা দোষে কারাগারে ছিলাম। যাতে আমার মতো কারাগারে কাউকে থাকতে না হয়, সেজন্য কারাগারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত।