ছোলার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। উচ্চমাত্রায় প্রোটিন সমৃদ্ধ ছোলা কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে মিলবে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ থাকে প্রায় ১৮ গ্রাম। এ ছাড়াও এতে থাকে কার্বোহাইড্রেট ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ১ ও বি ২ আছে।
ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস আছে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের রোজ সকালে কাঁচা ছোলা খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
ছোলায় শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভালো। জেনে নিন প্রতিদিন সকালে ছোলা খেলে যেসব উপকার মিলবে-
>> ছোলা মলিবেডনাম ও ম্যাঙ্গানিজের দারুন উৎস। ছোলায় প্রচুর পরিমাণে ফলেট ও ফাইবার থাকে। একই সঙ্গে আছে আমিষ, ট্রিপট্যোফান, কপার, ফসফরাস ও আয়রন।
ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তে চর্বি কমায়।
>> অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের মতে, খাদ্যতালিকায় ছোলা রাখলে কোলেস্টেরল ও খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে। ছোলায় দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় উভয় ধরনেরই ফাইবার থাকে।
যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম ছোলা খায় হৃদরোগ থেকে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৯ শতাংশ কমে যায়।
>> আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অল্পবয়সী নারীরা বেশি পরিমাণে ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্রবণতা কমে যায়।
যেহেতু ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এ ছাড়াও ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তী মেয়েদের হার্ট ভালো রাখে।
অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দৈনিক আধা কাপ ছোলা, শিম ও মটর খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়।
এ ছাড়াও ছোলায় থাকা আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
>> ছোলা ক্যানসার প্রতিরোধেও কাজ করে। কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবেষণায় প্রমাণ করেছেন, বেশি পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড খাবারের সঙ্গে গ্রহণের মাধ্যমে নারীর কোলন ক্যানসার ও রেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
এ ছাড়াও ফলিক অ্যাসিড রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপও কমায়। তাই নিয়মিত ছোলা খাওয়া উচিত।
>> হাড় মজবুত করতেও ছোলার ভূমিকা অনেক। ছোলায় থাকা গুনাগুণ দেহকে করে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম।
>> ছোলা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। ছোলায় থাকা ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়াও ছোলায় থাকে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ। ছোলায় থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যও সারায়।
>> ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও ছোলা বেশ উপকারী। ১০০ গ্রাম ছোলায় থাকে ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট ও ৫ গ্রাম ফ্যাট। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল।
>> যৌনশক্তি বাড়াতেও ভূমিকা রাখে ছোলা। শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরোনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্যও কাজ করে ছোলা ভাজা। ছোলা বা বুটের শাকও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।